বরগুনার তালতলীতে পায়রা নদীর ভাঙনে গত এক বছরে নিঃস্ব হয়েছেন ৫০০ পরিবার। এখনও ভাঙন আতঙ্কে দিন পাড় করছেন নদী পাড়ের প্রায় দুই হাজার পরিবার। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। আর যাদের অন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই তারা এখনও ঝুঁকি নিয়েই থাকছেন পায়রার পাড়ে।
উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রাম ঘুরে জানা যায়, এসব এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার গত এক বছরে নদীগর্ভে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, ফলের বাগান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় ৫০ বছর ধরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তাদের দুই হাজার একর ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়। বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। সরকারের নজরদারি না থাকায় এখনও নদীগর্ভে প্রতি বছরই হারিয়ে যাচ্ছে বসতঘর। ভাঙন প্রতিরোধের টেকসই বেরিবাঁধের প্রত্যাশা তাদের।
বসতবাড়ি হারানো নলবুনিয়া গ্রামের নুর হোসেন বলেন, সর্বনাশা পায়রা আমাদের বসতঘর গিলে খেয়েছে দুই দিন আগে। তাই এখন আবার এই ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছি। আমার যাওয়ার জায়গা নেই। স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখানেই থাকতে হবে।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও জেলে মাহমুদ মাঝি বলেন, গত এক বছরে আমার বসতঘরসহ এই এলাকার ৫০০ বসতঘর পায়রার পেটে। মাঝে মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আসেন, পরিদর্শন করে আবার চলে যায়। কিন্তু আমাদের কষ্ট তারা বোঝে না, তাই ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
জয়ালভাঙ্গা গ্রামের মিনারা বেগম, বিবিজান বেগম, আলেয়া বেগমসহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, ফসলি জমি, মাছের ঘের, বসতঘর সবকিছু নদীতে ভেসে গেছে। রাস্তার পাশে ছাপড়া দিয়ে সন্তানদের নিয়ে কোনোমতে জীবন যাপন করছেন তারা। অনেকেই সরকারি আবাসনে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ শহরে চলে গেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে।
নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু মিয়া বলেন, নদী ভাঙনের কাছে আমরা অসহায়। গত এক বছরে ৫০০ বসতঘর পায়রার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এখনও দুই হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন নদীর পাড়ে। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংসদ সদস্যের কাছে একাধিকবার গিয়েছি, বিভিন্ন সময়ে তাদের মুঠোফোনে জানিয়েছি এই এলাকার তীব্র ভাঙনের কথা।
শুধু আশ্বাস পেয়েছি, বাস্তবায়ন হয়নি। নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে আমার ইউনিয়নে হতদরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। যা সরকারের জন্যও বদনাম। আমি চাই আমার এলাকা ও জনগণকে এই ভাঙন রোধ করে রক্ষা করা হোক।
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, আমাদের সি আইপি-২ প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ভাঙন ঠেকানো যাবে। আশা করছি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
নদী বন্দর/এসএইচবি