প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন দেশটির রিয়েল এস্টেট মোঘল-খ্যাত স্রেথা থাভিসিন। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার সমর্থন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে নতুন জোট সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত এবং প্রায় তিন মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অচলাবস্থার অবসান ঘটেছে। স্রেথা এমন একদিনে থাইল্যান্ডের সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন, যেদিন কয়েক বছরের নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেই কারাবন্দী হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা।
স্রেথা থাভিসিনের রাজনৈতিক দল ফেউ থাই পার্টি গত মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। কিন্তু তারপরও থাইল্যান্ডের সংসদের উভয়কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দেশটির ৩০তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দেশটির সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভোটের গণনা অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্য এবং সর্বশেষ থাই জান্তার নিয়োগকৃত উচ্চকক্ষ সিনেটরদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৭৪ ভোটের সীমা পেরিয়ে যান স্রেথা।
প্রায় এক ডজন দলকে নিয়ে ফেউ থাইয়ের গড়া জোট সংসদের নিম্নকক্ষের ৫০০ আসনের মধ্যে ৩১৪টি দখল করেছে। তবে সাবেক বিরোধী শক্তি ও শত্রুদের জোটে নেওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ফেউ থাই পার্টি। এমনকি এই জোটের মধ্যে ফেউ থাইয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা সেনা-সমর্থিত রাজনৈতিক দলও রয়েছে।
ফেউ থাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ডে ফিরে আসার কয়েক ঘণ্টা পর সংসদে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পরপরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত নির্বাচনে দেশটির সংস্কারপন্থী রাজনৈতিক দল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পাওয়ার পর সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছিল। কিন্তু দেশটির রক্ষণশীল ও সেনা-পন্থী আইনপ্রণেতা এবং সিনেটরদের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত ফেউ থাইয়ের সরকার গঠনের প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
গত শুক্রবার এক ভাষণে থাই রিয়েল এস্টেট জায়ান্ট সানসিরির সাবেক প্রধান স্রেথা দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রায় এক দশকের সেনা-সমর্থিত শাসনের কারণে দেশটির শহুরে এবং গ্রামীণ যুবকদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে; যার ফল দেশটির মে মাসের নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি পেয়েছে। অবাক করার মতো জনপ্রিয়তা পেয়ে দেশটির ওই নির্বাচনে প্রথম স্থান দখল করে দলটি।
তবে সেনাবাহিনী ও রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের সমর্থন না পাওয়ায় সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় এমএফপি। যে কারণে দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্রেথার ফেউ থাই পার্টির সরকার গঠনের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়।
গত মাসে সংসদে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ভোটাভুটিতে সেনা-পন্থী আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল সিনেটরদের যথেষ্ট সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন এমএফপির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত। পরে দেশটির সাংবিধানিক আদালত তাকে সংসদ থেকে বহিস্কার করে।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।
নদী বন্দর/এসএইচবি