সম্প্রতি টানা বর্ষণে পানি বাড়ায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী দশআনী। শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চরের ৭ নম্বর চর এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে মুখে স্থানীয়দের আবাদি জমি, বসতবাড়ি, শতবর্ষী বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বহুতল ভবন, শহীদ মিনার ও পাকা মসজিদ-মাদরাসা। এতে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৭ নম্বর চরে গত এক দশকে দফায় দফায় দশআনী নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। বসতভিটা, কবরস্থানসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গেলো দুসপ্তাহেই প্রায় একশো একর আবাদি জমি, ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীতে হারিয়ে গেছে গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। ফসলি জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে চোখে মুখে চিন্তার ছাপ নদী তীরবর্তী মানুষের।
ব্যবসায়ী ছমির আলী বলেন, এবারের ভাঙনের মুখে পড়েছে শতবর্ষী ৭ নম্বর চর বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহীদ মিনার, কবরস্থান, হাফেজিয়া মাদরাসা ও ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত মসজিদ। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে এসব প্রতিষ্ঠান।
কৃষক তারা মিয়া বলেন, আমনের বীজতলাসহ প্রায় তিন বিঘা জমি এবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে আমি সর্বস্বান্ত। ভাঙনের চিন্তায় ঘুমাইতেও ভয় করে।
সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুদ্দিন মণ্ডল বলেন, সম্প্রতি ভাঙনে আমার বাড়ির একাংশ বিলীন হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাকিটুকুও নদীগর্ভে চলে যাবে। তখন আমি নিজেই গৃহহীন হয়ে পড়বো।
চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শফিউল আলম বলেন, আমাদের গ্রামটি শেরপুরের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা। নদীর ভাঙনে যদি স্কুলটি বিলীন হয়ে যায়, তাহলে এ এলাকার শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের আর কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। তাই আমরা দ্রুত নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
সদর উপজেলার চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে, কোনো জমি অবশিষ্ট থাকবে না। এখনই জরুরি ভিত্তিতে একটি শক্ত বাঁধ দরকার।
শেরপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, সম্প্রতি নদীভাঙনের সব চিত্র আমরা পর্যালোচনা করেছি। এরই মধ্যে ভাঙনের ভয়াবহতা নিরূপণ করে, ২০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
নদী বন্দর/এসএইচবি