পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে পালাতে চাইছে- এমন মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা কখনো ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলবো, পালিয়ে না গিয়ে মাঠে এসে আমাদের সঙ্গে খেলুন। আমরা খেলেই জিততে চাই।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বলেছেন- আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। আমি উনাকে বলবো- আমরা চাই বিএনপি আগামী নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি নিয়ে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু বিএনপির কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ফখরুল সাহেবকে বলবো মাঠে আসার জন্য এবং মাঠে এসে আমাদের সঙ্গে খেলার জন্য। আমরা খেলেই জিততে চাই। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ আগামী দিনের সরকার নির্বাচিত করবে।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আজকে যেভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে, প্রতিটি শহর এবং গ্রামের যে পরিবর্তন ঘটেছে, মানুষের ভাগ্যের যে পরিবর্তন হয়েছে…। আগে মানুষ ডাল-ভাতের কথা বলতো, এখন ডাল-ভাতের পরিবর্তে মাংসের দাম বাড়লে মানুষ সেটি নিয়ে কথা বলে। এটিই হচ্ছে উত্তরণ।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আস্থা আছে বিধায় আমরা সবার সঙ্গে খেলে জিততে চাই। বিএনপিকে বলবো খেলার মাঠ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার জন্য।
বিএনপির মত বড় দলকে ছাড়া আগামী নির্বাচন করলে বিতর্ক এড়ানো যাবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের মাঠে আমরা একটা পক্ষ। আমরা আয়োজক পক্ষ নই। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে যদি তাদের (বিএনপির) কোনো অভাব-অনুযোগ কিছু থাকে সেটি নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি আমাদের ডাকে তাহলে আমরাও সেখানে যাবো। আমি মনে করি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, আমরা আশা করবো আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, ‘কথা বেশি নয়, কথা একটাই- এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে’। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে মির্জা ফখরুল নিজের এবং বিএনপির পতন, দুটিই অবলোকন করবেন।
বিএনপি আগামী নির্বাচন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে সরকারের ভূমিকা কী হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। ২০১৪ সালে আমরা তাদের মোকাবিলা করেছি, ২০১৪ সালের পরিস্থিতি বিএনপি কখনো সৃষ্টি করতে পারবে না। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক, সেটি আমরা চাই। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণের অংশগ্রহণই হচ্ছে মুখ্য।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭০ সালে নির্বাচন হয়েছিল। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে তখন স্লোগান দেওয়া হয়েছিল- ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন কর। ১৯৭০ সালে নির্বাচন না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। অনেক রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিল এবং দেশও স্বাধীন হয়েছিল।
বিএনপি ভোটে না এলে ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে কোনো শঙ্কা তৈরি হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে সেটি আমরা মনে করি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নির্বাচনে আসা উচিত বলেও আমরা মনে করি। যদি তারা নির্বাচনে না-ও আসে জনগণ ব্যাপকভাবে ভোটে অংশ নেবে।
বিএনপি আবার সহিংসতা করলে তা মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি রয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আবার একই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার বিএনপির প্রস্তুতি আছে। তারা ২০১৩-১৪ বা ২০১৫ সালে যে আগুন সন্ত্রাস করেছে সেটি আর বাংলাদেশের মানুষ করতে দেবে না এবং আগুন সন্ত্রাস প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের সঙ্গে থাকবে।
বিএনপি ভোটে না এলে আওয়ামী লীগ কি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোটে আসতে দেবে- এ বিষয়ে দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা কেন আমাদের বিদ্রোহীদের ওপেন করে দেবো। বিএনপি না এলেও তো আরও অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি না আসা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দেখেছেন। সেখানে অনেক রাজনৈতিক দল, অনেক প্রার্থী অংশ নিয়েছে। বিএনপি তো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তো ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিএনপি না এলে জনগণ আসবে না, তা কিন্তু নয়- অতীতে তা প্রমাণ হয়েছে।
বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে- এমন প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, দেখুন বিএনপি জনগণের কত শতাংশকে প্রতিনিধিত্ব করে জানি না। কিন্তু তাদের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও জনগণ তো ভোট বর্জন করেনি। আমরা চাই বিএনপি ভোটে আসুক। জনগণের অংশগ্রহণ থাকলে সেই ভোট নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের বিচারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
নদী বন্দর/এসএইচবি