ভোলা সদর মেঘনা নদীর তীরে ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকায় শহর রক্ষায় ব্লকবাঁধের ৮০ মিটার জায়গা ধসে নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছেন তিনটি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
পাউবো সূত্র জানায়, ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর মেঘনার তীর রক্ষায় ইলিশা-রাজাপুর রক্ষা প্রকল্পের আওতায় চার কিলোমিটার এলাকা সিসি ব্লক স্থাপনের মধ্য দিয়ে টেকসই ব্লক বাঁধ নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সরেজমিন জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর মেঘনা নদীর তীব্র পানির চাপে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের তালতলি লঞ্চঘাট এলাকার দুটি পয়েন্টে তীর সংরক্ষণ সিসি ব্লকের ৭০ মিটার ধস দেখা দেয়। ১৩ সেপ্টেম্বর আবার নতুন করে আরেকটি পয়েন্টে ১০ মিটার সিসি ব্লক বাঁধে ধস দেখা দেয়। তিনটি পয়েন্টে মোট ৮০ মিটার মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ সিসি ব্লকের ধসের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ইলিশার শহর রক্ষা বাঁধ, তিনটি লঞ্চঘাট, দুটি ফেরিঘাটসহ তিন ইউনিয়নের ফসলি জমি, বসতঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ইলিশা এলাকার বাসিন্দারা জানান, ইলিশা ঘাটের পূর্বে মেঘনা নদীতে বিশাল এলাকায় চর পড়েছে। ওই চরে ঢেউ আছড়ে পশ্চিমের ব্লকবাঁধে আঘাত করছে। ফলে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই চর খনন করা দরকার। খনন করলে লঞ্চ ও ফেরি চলাচলে সুবিধা হবে।
ইলিশা এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেক জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হঠাৎ উজানের ঢল নেমে বাঁধের ব্লক ধসে নদী লোকালয়ের দিকে আসছে। এ রকম চলতে থাকলে ভোলা সদর উপজেলা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে।
ইলিশা জংশন এলাকার বাসিন্দা মোসারফ হোসেন বলেন, মেঘনা তীরবর্তী ভাঙন রোধে দুই বছর আগে ব্লক বসানোর কাজ শেষ হয়। হঠাৎ করে আবার ব্লক ধস শুরু হয়। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ভোলা শহর হুমকি মুখে পড়বে। তাই এখানে আবারো ব্লক দেওয়া উচিত।
ইলিশা জংশন বাজার ব্যবসায়ী জসিম বলেন, আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি, যদি ভাঙনের স্থানী সমাধান না করা হয় তাহলে যেকোনো সময় ঐতিহ্যবাহী এ জংশন বাজারসহ স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
নদীর ভাঙন তীরের বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করা পারুল বেগম বলেন, নদীতে ভিটেমাটি ভাঙতে ভাঙতে আজ আমরা নিঃস্ব। এখন কোনোমতে এই বেড়ির পাশে ঘর করে থাকছি। খুব ভয়ে আছি এবার ভাঙন হলে কই যাবো।
ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন জানান, ধস দেখা দেওয়া ব্লকবাঁধ থেকে বেড়িবাঁধের দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ ফুট। তাৎক্ষণিক এই ধস ঠেকাতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভোলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ইলিশার লঞ্চঘাট এলাকায় তিনটি পয়েন্টে ৮০ মিটার বাঁধে ধস নেমেছে। ওই এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে ১২ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা শুরু হয়েছে। সেই বস্তা ফেলেই ধস ঠেকানো হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ফেলা বস্তায় মোটা বালুরও বরাদ্দ ধরা নেই।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, কী কারণে তীর সংরক্ষণ ব্লকবাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে, তা নিয়ে জরিপ হচ্ছে। ওই প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ জানা যাবে। পরবর্তী শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী বন্দর/এসএইচবি