হঠাৎ করেই ভাঙন দেখা দিয়েছে পদ্মা সেতুর বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকায়। দুই দিনে ১০টিরও বেশি বসতবাড়ি গাছপালাসহ নদীতে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেয়ার সময়ও পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী আরও শতাধিক পরিবার।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে পদ্মা। তীব্র স্রোতের হঠাৎ করেই এই ভাঙন। ভিটে মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে এখন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং বড় নওপাড়া এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের ৮ থেকে ১০টি পরিবারের শতাধিক মানুষ ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙনের ঝুঁকি বেড়েছে। দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার চোখের সামনে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিয়েছে অন্তত ২০টি পরিবার।
তবে ভাঙন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড টানা দুইদিনে ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি জিও ব্যাগ। তবে নদীতে গভীরতা বেশি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কার্যক্রম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, উজানের ঢলের পানি পদ্মা হয়ে সাগরের দিকে যাওয়ায় নদীতে এখন প্রচণ্ড রকমের স্রোত বইছে। মূল পদ্মায় চর জেগেছে।
সেজন্য জলযানগুলো নদীর এ অংশের তীর ঘেঁষে যাতায়াত করছিল। স্রোতে হঠাৎ করেই নদীর তলদেশ থেকে মাটি ও জিওব্যাগ সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।এ অংশ পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ অংশের ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। এরপরও কেন থামছে না ভাঙন- এই প্রশ্ন স্থানীয়দের।
এর আগেও কয়েকবার উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন দেখা দেয়। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে ইউনিয়নটির তিন নম্বর ওয়ার্ডের বড় নওপাড়া ভাঙনের মুখে পড়ে। এতে অর্ধশত বাড়ির ভিটেমাটি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়। সে সময় পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে এ অংশসহ ৪.৬২ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙতে ভাঙতে এ ইউনিয়নটি প্রতিবছর ছোট হচ্ছে। ভাঙনরোধে সরকার ৫০০ কোটি টাকার যে প্রকল্প নিয়েছে, এখানে বড় নওপাড়াও রয়েছে। ঠিকঠাক মতই ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চলছিল। মাঝখানে এক মাসের মতো এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। যদি বন্ধ না থাকতো, তাহলে ভাঙন নাও হতে পারতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ভাঙনের খবর শুনে চারবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানকার ভাঙন নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে পাঁচ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন নিয়ন্ত্রণের জন্য চেস্টা চলছে। ভাঙন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলা হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থদের শিগগিরই সরকারি সহযোগিতায় পুর্নবাসনে উদ্যােগ নেওয়া হবে।
নদী বন্দর/এসএস