এক দফা দাবি আদায়ে দুর্গাপূজার পর সরকারকে শেষ বার্তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এর জবাবে আওয়ামী লীগও শেষ বার্তা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থেকেই নির্বাচন দেবেন, ভোটে আবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জাতির পিতার কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন ও শেখ রাসেল দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে তিনি এ বার্তা দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলের পকেট গরম। মালপানি ভালো আসছে। উনার কথাও গরম। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আমাদের ধমক দেন, ভয় দেখান। মির্জা ফখরুল, পাঁচতারকা হোটেলে নাশতা খেয়ে অনশন করেন তিন ঘণ্টা। আড়াই ঘণ্টা পর বিদেশি জুস খেয়ে অনশন বন্ধ করেন।
বিএনপি মহাসচিবের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই আন্দোলন করছেন? আবার আমাদের বার্তা দিচ্ছেন? দিনক্ষণ বলে দিচ্ছেন? কবে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে সেই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন? আপনারা বার্তা দেওয়ার কে? কার কাছে ক্ষমতা দেবেন শেখ হাসিনা? আপনার কাছে নাকি দণ্ডিত যুবরাজ তারেক রহমানের কাছে?
এসময় আওয়ামী লীগের বার্তা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনি শেষ বার্তা দিয়েছেন, আমিও বার্তা দিচ্ছি- আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আবারও তিনি ক্ষমতায় বসবেন। এর অন্যথা বা ব্যত্যয় হবে না। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না। এটাই আমাদের শেষ বার্তা।
এদিনও সমাবেশ থেকে যথারীতি ‘খেলা হবে’ স্লোগান তোলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, খেলা হবে কোয়াটার ফাইনাল। তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। আজিমপুর গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে। ওটা আর ফিরে আসবে না। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না। ওয়ান/ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন আর সফল হবে না।
এসময় বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুল সাহেব উৎসাহিত হচ্ছেন। পশ্চিমারা উৎসাহ দিচ্ছে। ফখরুল সাহেব, দুনিয়ার অবস্থা ভালো নয়। যাদের কথা বলছেন, তাদের চারপাশে অশান্তির আগুন। তারা ঘর সামলাবে নাকি আপনাকে উৎসাহ দেবে? উৎসাহের দিন চলে গেছে। খেলা হবে, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। এ খেলায় জিতবে শেখ হাসিনার সৈনিকেরা।
তিনি বলেন, কতলোক আজকে। এই স্পিরিট যেন থাকে। কেউ কেউ বলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে স্পিরিট বাড়ে, সরকারি দলে নরম। এখন দেখি সরকারেও স্পিরিট আছে।
এসময় তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দাঁড়াতে দেবো না। অবরোধ যারা করবে, তারাই বাধা দিচ্ছে নির্বাচনে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় আমরা দেখবো।
দেশবাসীকে ওবায়দুল কাদের বলেন, নৌকা ছাড়া উপায় নেই। বাংলাদেশে শান্তি-সুখ চাইলে নৌকা, উন্নয়ন চাইলে নৌকা। নৌকা ছাড়া গণতন্ত্র থাকবে না। নৌকায় ভোট দিলে গণতন্ত্র থাকবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সারা দুনিয়ায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমরা সেটারই শাস্তি পাচ্ছি। দাম বাড়াচ্ছে বড় বড় শক্তি। আজ আইএমএফের পরিচালক বলছেন, ‘বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিকভাবে চলছে। আস্তে আস্তে কমলেও ইনফ্লুয়েশন (মূল্যস্ফীতি) কমছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।’ আমিও বলি- আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এখন আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, আমরা স্বীকার করি। কিন্তু মনে রাখবেন- একজন মানুষ আছে (প্রধানমন্ত্রী), আপনাদের এই কষ্ট লাগবে যিনি দিনরাত পরিশ্রম করছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু ও ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান, সাদেক খান, এস এম মান্নান কচি, হুমায়ুন কবির, নুরুল আমিন রুহুল, আব্দুল কাদের খান, কাজী মোরশেদ কামাল, মাহবুবুর রহমান হিরণ, দিলীপ রায় ও আজিজুল হক রানা।
নদী বন্দর/এসএইচবি