গাজার উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং গাজার মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী অভিযান ও বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
শনিবার ভোরে এক বিজ্ঞপ্তিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার গাজা উপত্যায় নিহত হয়েছেন ১৮৭ জন ফিলিস্তিনি। এর ফলে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ২১ হাজার ৫০৭ জনে দাড়িয়েছে, যা শতাংশ হিসেবে গাজার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ।
গাজায় অবস্থান করা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস, উত্তরাঞ্চলীয় নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং গাজার মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক গুলি ও গোলা নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী। বোমা বর্ষণ করেছে বিমান বাহিনীও।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই খান ইউনিস দখল করেছিল ইসরায়েলি সেনারা। সেখান থেকেই সর্বশেষ অভিযানটি পরিচালনা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষঅমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্ত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গাজায় অভিযানরত রুশ সেনারা বর্তমানে হামাসের বিভিন্ন কমান্ড সেন্টার এবং অস্ত্রাগারের ধংস করছে। সর্বশেষ সেখানকার একটি সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্কটির সঙ্গে গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বাসভবনের সংযোগ ছিলো।
এদিকে শুক্রবার নুসেইরাতে শরণীর্থী ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় গাজাভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-কুদস টিভিতে কর্মরত এক সাংবাদিক সপরিবারে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং সহযোগী সাংবাদিকরা।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস অনুসারে, এটি ইসরায়েলি আক্রমণে নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের সংখ্যা ১০৬ জনে পৌঁছেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালে আনা হয়েছে এমন নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২১ হাজার ৫০৭ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৩০০ নারী ও ৮ হাজার ৮০০ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মাঝে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ৮৪ ইসরায়েলি এবং ২৪ বিদেশিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি শেষে গত ১ ডিসেম্বর থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল ও হামাস।
অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। এর মধ্যে বন্দিবিনিময়ে ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তাদের কাছে এখনো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নদী বন্দর/এসএইচবি