রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। শনিবার (৬ জানুযারি) দিবাগত রাত ৩টা থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি। এ লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ঘিরে সিলেটের ৬টি আসনে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করলেও শঙ্কায় রয়েছেন দুই মন্ত্রী। বিএনপিবিহীন নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় সিলেট-১ আসনের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। দুজনই আওয়ামী লীগের মনোননীত প্রার্থী। সাধারণ ভোটার ছাড়াও নিজ দলের নেতাকর্মীদের ভোট নিয়েও চিন্তিত তারা। তবে এটিকে কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন না দুই মন্ত্রী।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও দুই নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-১ আসনে (সিটি করপোরেশন ও সদর) আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ আসনে নির্বাচনের আমেজ কমে যায়। বর্তমানে যারা ড. মোমেনের প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন তাদের কোনো শক্ত অবস্থান নেই। এমনকি তাদের পরিচিতিও নেই নগরজুড়ে। যার ফলে প্রচারণায়ও তাদের খুব একটা দেখা যায়নি।
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মাঠে একাই দৌড়াচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) তার শেষ নির্বাচনী জনসভায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাদের দেখা গেলেও এর আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন হাতেগোনা দুয়েকজন নেতা। এমনকি সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও নির্বাচনী প্রচারণায় তেমনটা চোখে পড়েনি। অথচও সিলেটের অন্যান্য আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, সিলেট-১ আসনে পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের বিজয় প্রায় নিশ্চিত। এ আসনে কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি সহজেই বিজয়ের মালা পরবেন। সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ভাবছেন তিনি জয়লাভ করছেন, এতো দৌড়ে কী হবে। যত শতাংশ ভোটই কাস্ট হোক মোমেনেরই বিজয় হবে। সেই দিক থেকে মোমেনের প্রচারণায়ও অনেক নেতাকর্মী যাননি। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতো সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এ বিষয়টি কাজ করতে পারে। যার ফলে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথা জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা।
অবশ্য ভোটারের উপস্থিতি চ্যালেঞ্জ মনে না করলেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন সিলেট-১ আসনের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) মার্কিন পর্যবেক্ষণ দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেই শঙ্কার বিষয়ে কথা বলেন ড. মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন পর্যবেক্ষণ দল জানতে চেয়েছে-নির্বাচনে কেমন সাঁড়া পাচ্ছেন? কেমন উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে? আমি বললাম খুব ভালো সাঁড়া পাচ্ছি। তবে আমার তিনটি পর্যবেক্ষণ আছে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শক্তিশালী না, বিশেষ করে বিরোধী দল নেই। যার ফলে আমার লোকেরা মনে করছে উনিতো জয়ী হবেন তাহলে লাইনে দাঁড়িয়ে কী হবে। আমি আশা করবো আমার দলের লোকজন যাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়।
তবে সাধারণ লোকজন ভাববে উনি তো বিজয়ী হবেন, খামাখা গিয়ে ভোট দিয়ে কী হবে। আর আরেকটি হলো ভোটের তারিখ। এটা আমি খেয়াল করিনি। আমেরিকায় মঙ্গলবারে ভোট হয়। আমাদের এখানে ৭ জানুয়ারি না হয়ে মঙ্গলবারে ভোট হলে লোকজন শহরে থাকতো। এখন টানা তিনদিন ছুটি থাকায় অনেকে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে চলে গেছে। এতে করে আমরা অনেক ভোটার হারাবো। এটা আমরা আগে খেয়াল করিনি। এটা চিন্তা করা উচিত ছিল।’
সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে তিনি তরুণ ভোটারদের ভোটদানে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে বলে জানান।
সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের প্রার্থী আব্দুল বাসিত (ছড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ইউসুফ আহমদ (আম), ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক (মিনার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. সোহেল আহমদ চৌধুরী (ডাব)।
একই অবস্থা সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ছাড়াও এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের নাজিম উদ্দিন (মিনার) এবং তৃণমূল বিএনপির মো. আবুল হোসেন (সোনালী আঁশ)। ইমরান আহমদের বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় মোমেনের মতো তারও জয় পাওয়া অনেকটাই সহজ বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন।
সিলেট-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৬ লাখ ৩৪ হাজার ২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৩ জন ও নারী ভোটার ৩ লাখ ৩ হাজার ১৮১ জন। সিলেট-৪ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৭ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ১৩ জন।
নদী বন্দর/এসএইচবি