গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব যেন থামছেই না। এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ২৯ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ওয়াফা নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এবং রাফাহ প্রান্তে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালানোয় এক রাতেই ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এর আগে জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাফায় ইসরায়েলি স্থল আগ্রাসনের ভয়ে ফিলিস্তিনিরা দেইর আল-বালাহ শরণার্থী শিবিরসহ মধ্য গাজার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।
অপরদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের যুদ্ধবিরতি এবং বন্দীদের মুক্তির দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৮৫৮ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৬৮ হাজার ৬৬৭ জন।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে, জিম্মিদের মুক্ত করতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা বিষয়টি তিনি গভীরভাবে অনুভব করছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকেই ইসরায়েলকে সব ধরনের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে গাজার রাফা শহরের পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সেখানকার মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুধার্থ। তারা খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) তাদের সর্বশেষ দৈনিক আপডেটে জানিয়েছে, রাফা শহরের লোকজন খাবারের জন্য এমন করুণ পরিস্থিতিতে রয়েছে যে, তারা খাবারের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছে না। তারা ত্রাণবাহী ট্রাক দেখলে সেগুলো থামাচ্ছে যেন সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে খাবার নিয়ে খেতে পারে।
ওসিএইচএ বলছে, দক্ষিণ গাজার ওই জনবহুল শহরে মানবিক সংকট নিয়ে আতঙ্কিত অবস্থার মধ্যেই খাদ্য সংকটের কারণে লোকজন মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং তাদের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জনাকীর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সেখানকার লোকজনের জরুরি ভিত্তিতে খাবার প্রয়োজন। তারা ক্ষুধার্ত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজায় আরও ত্রাণবাহী ট্রাকে খাবার সরবরাহ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানকার লোকজনের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
শুধুমাত্র রাফাহ এবং কেরেম শালোম (কারেম আবু সালেম) ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সহায়তা গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারছে। ফলে মধ্য এবং উত্তর গাজায় খাদ্য সরবরাহ করতে হলে প্রথমে রাফাহ দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। এদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আশদোদ বন্দর দিয়ে গাজা উপত্যকার জন্য পাঠানো আটার একটি বড় চালান আটকে দিয়েছে।
নদী বন্দর/এসএইচবি