দুই বছর পেরিয়ে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ গড়িয়েছে তৃতীয় বছরে। দীর্ঘ এই সময়ে রুশ আগ্রাসন ও ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় হয়েছে হাজারও মানুষের প্রাণহানি। এর মধ্যে নতুন পরিসংখ্যান সামনে এনেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তিনি বলেছেন, রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পর তার দেশে ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। তবে তিনি আহত সেনাদের সংখ্যা সামনে আনেননি।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার পুরোমাত্রার আগ্রাসনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, তিনি রুশ হামলায় আহত সেনাদের সংখ্যা জানাবেন না, কারণ এটি রাশিয়ার সামরিক পরিকল্পনায় সহায়তা করবে।
সাধারণত ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা যুদ্ধে সেনাদের হতাহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না এবং এ বিষয়ে অন্যান্য অনুমানেও অনেক বেশি সৈন্য হতাহতের কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া সহায়তার অর্ধেকই বিলম্বিত হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করার পর জেলেনস্কির পক্ষ থেকে এই পরিসংখ্যান সামনে এলো।
জেলেনস্কি রোববার বলেন, রাশিয়ার উদ্ধৃত স্ফীত পরিসংখ্যানের প্রতিক্রিয়া হিসাবে নিহত ইউক্রেনীয় সেনাদের আপডেট সংখ্যা সামনে এনেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধে ৩১ হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্য মারা গেছে। ৩ লাখ বা দেড় লাখ নয়, বা পুতিন এবং তার মিথ্যাবাদী চক্র যা বলছে সেটিও নয়।’
যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের এলাকায় কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষ মারা গেছে কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে কতজন মারা গেছে, কতজন নিহত হয়েছে, কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, কতজনকে নির্বাসিত করা হয়েছে তা আমি জানি না।’
ইউক্রেনের পক্ষে সামরিক মৃত্যুর সংখ্যা সামনে আনা বিরল এবং অনুমানের ভিত্তিতে অন্যান্য যেসব পরিসংখ্যান বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে, তাতে রুশ হামলায় নিহত ইউক্রেনীয় সেনাদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
মার্কিন কর্মকর্তারা গত বছরের আগস্টে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত ইউক্রেনীয় সেনাদের সংখ্যা ৭০ হাজার এবং আহত সেনাদের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার বলে উল্লেখ করেছিল।
অন্যদিকে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধে ১ লাখ ৮০ হাজার রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও কয়েক হাজার আহত হয়েছে।
তবে মিডিয়াজোনা ওয়েবসাইটের সাথে এক যৌথ প্রকল্পে বিবিসি রাশিয়ান জেনেছে, যুদ্ধে ৪৫ হাজার জনেরও বেশি রাশিয়ান সেনা মারা গেছে। তবে সেনা নিহতের মোট সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমান করে, যুদ্ধে ৩ লাখ ৫০ হাজার রুশ সেনা নিহত বা আহত হয়েছে।
মূলত যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকী এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন নিজের ভূখণ্ড থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ বলেছেন, কিয়েভের জন্য সহায়তা সরবরাহের অভাব ইউক্রেনকে ‘যুদ্ধের গণিতে’ আরও অসুবিধায় ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য এবং অসম্ভব সবকিছুই করি কিন্তু সময়মতো সহায়তা সরবরাহ না করলে তা আমাদের ক্ষতি করে।’
জার্মানি গত বছরের নভেম্বরে সতর্ক করে বলেছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মার্চের মধ্যে ১০ লাখ আর্টিলারি শেল সরবরাহ করার পরিকল্পনা করণেও তা পূরণ করা যাবে না। আর জানুয়ারিতে ইইউ জানায়, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আর্টিলারি শেল ইউক্রেনে পৌঁছে যাবে এবং প্রতিশ্রুত পরিমাণ ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সেখানে পৌঁছাতে পারে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, গত বছর ইউক্রেনের অতি প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ আগে শুরু না হওয়ার একটি কারণ ছিল অস্ত্রের অভাব। পরে সেই পাল্টা-আক্রমণটি মূলত ব্যর্থ হয়ে যায়।
এছাড়া জেলেনস্কি রোববার ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাল্টা আক্রমণের সেই পরিকল্পনা সময়ের আগেই রাশিয়ার কাছে ফাঁস হয়ে যায়।
নদী বন্দর/এসএকে