রমজানে সংযম না করে বিএনপি যতই কর্মসূচি পালন করবে ততই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রমজানে সরকারবিরোধী কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি- এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এতে করে তাদের জনসম্পৃক্ততা অব্যাহতভাবে কমতে থাকবে। রোজার মাসে সংযম না করে বিএনপি যতই আন্দোলন করবে তারা ততই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
এসময় সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সহিংসতাকারীদের বিষয়ে সরকারের শক্ত অবস্থান তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো অপরাধ ও অপকর্ম যদি সরকারি ছত্রছায়ায় হয়ে থাকে এবং সরকার যদি কাউকে ছাড় না দেয় তখন বুঝতে হবে সরকার এখানে শূন্য সহিষ্ণুতা বজায় রেখেছে। অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিচার করা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বুঝি না। অপরাধী অপরাধীই। অপরাধী যেই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের একটা বিষয় আছে। সরকার অত্যন্ত সতর্ক ও সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে, যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব সংকটের প্রেক্ষাপটেও এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। যা বিএনপির সময় হয়নি। তারা শুধু দাম বাড়াতে পারে। বিশ্ব সংকটের মধ্যে তেলের কমানো নিয়ে যারা সরকারের প্রশংসা করে না তারা বিরোধিতার নামে বিরোধিতা করে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, গতবারের মতো এবারও রমজানে সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো ইফতার পার্টি করা হবে না। এর পরিবর্তে সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গরিব ও সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটিসহ ২৩৩টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সারাদেশে একযোগে এই নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অনেক অপবাদ ছড়ানো হয়েছে। কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে এই নির্বাচনের ব্যাপারে বিতর্কিত খবর পরিবেশনও করেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের সাধারণ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে টার্ন আউট ঈর্ষণীয়। নির্বাচন কমিশন বলছে টার্ন আউট ৬০ শতাংশ।
তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রতি জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে- এ ধরনের অপপ্রচার যারা করে তাদের এই অপপ্রচারের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে টার্ন আউট প্রমাণ করে জনগণের নির্বাচনের প্রতি আকর্ষণ, আগ্রহ আরও বাড়ছে।
শেখ হাসিনার হাতেই এদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিরাপদ। এটাই প্রমাণিত হয়েছে সাম্প্রতিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বিশ্ব সংকটে আমাদের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি যথার্থ ক্রাইসিস ম্যানেজার। সারা বিশ্ব তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। তাদের কথায় রাজনীতি করি না। রাজনৈতিকভাবে চরমভাবে পরাজিত, বিপর্যস্ত বিএনপির পায়ের তলার মাটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে। দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করা- এই অসম্মানজনক কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, নিরপরাধ ব্যক্তি এখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে না। যারা অপরাধী, সন্ত্রাস করে এবং আগুন সন্ত্রাসে জড়িত জনগণের জানমাল রক্ষায় তাদের ছাড় দেওয়া কোনো দেশপ্রেমিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে থাকা নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা মানবতার প্রতীক। গত ৪৮ বছরে তার অর্জনের ধারেকাছেও কেউ যেতে পারেনি। বিএনপি হচ্ছে খুনি-সন্ত্রাসীদের দল। মানুষ পুড়িয়ে মারার দল। দুর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়া যে দুর্নাম অর্জন করেছে, তার জন্য সে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।
বিএনপি তাকে যতই নেতা বানানোর চেষ্টা করুক দেশের জনগণ তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেবে না। যতদিন তারেক জিয়া থাকবে ততদিন বিএনপি স্বাভাবিক কারণে জনবিচ্ছিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বিএনপির মিথ্যাচার এখন দলটির নেতাকর্মীরাও বিশ্বাস করে না।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
নদী বন্দর/এবি