প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনীতিতে আসে চরম ধাক্কা। যার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। আমরা এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলেছি। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতাদের বলেছি, ইফতার পার্টি না করে নিম্নআয়ের মানুষকে সহযোগিতা করতে। ইফতার পার্টি করে খাওয়া বড় কথা না, মানুষকে দেওয়াই বড় কথা। আমরা সেটাই করছি।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা স্বউদ্যোগে মানুষের কল্যাণ করে যাচ্ছেন, তাদের পুরস্কৃত করাই সব থেকে বড় কথা। এই পুরস্কার শুধু পুরস্কার নয়, আরও অনেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী হবে, সেটাই বড় কথা। যারা পুরস্কার পেয়েছেন আমি তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা দেশের বিভিন্ন স্তরে মানুষের কল্যাণে কাজ করা এমন আরও লোকদের বের করে পুরস্কৃত করতে চাই।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করে আমরা আগাচ্ছি। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। স্বাধীণতার মাসে এটাই আমাদের প্রত্যয়। স্বাধীনতার মাসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, গণহত্যায় জড়িতদের প্রতি ঘৃণা জানাই।
আর যেনো এরকম না হয়। এখনও ফিলিস্তিতে গণহত্যা চলছে, আমরা এটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। আমরা চাই এই গণহত্যা বন্ধ হোক। আমরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা কেমন আমরা জানি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করায় অনেক কষ্ট করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। একটাই লক্ষ্য ছিল, বাবার কাছ থেকে তার স্বপ্ন জনতাম বলে সে আলোকে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। আমরা বাংলাদেশের সে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, বাংলাদেশে ভাগ্য পরিবর্তনে। এখানে কেউ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না। সবাই খাদ্য, চিকিৎসা পাবে, সেই ব্যবস্থা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা দেশে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে, আমরা বিজয়ের কথা বলতে পারিনি। মু্ক্তিযোদ্ধা নিজের পরিচয় দিতে পারেনি। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। একদিকে খুনি, আরেকদিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজত্ব ছিল।
তিনি বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন, একটি স্বাধীন জাতি। যে জাতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি সমৃদ্ধ ভুখণ্ড পাবে। তিনি এজন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি অল্প সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। এটা এত সহজ ছিল না।
কিন্তু জাতির পিতা শেখ মুজিবের মতো নেতৃত্ব ছিল বলে সম্ভব হয়েছে। তিনি মাত্র তিন বছরের মধ্যেই দেশকে স্বল্পোন্নোত দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ঘুনে ধরা সমাজ তিনি ঢেলে সাজাবেন। তাই করেছেন। কিন্তু সেই সময়ই আসল আঘাত। স্বপরিবারে তাকে জীবন দিতে হলো। দুর্ভাগ্য আমাদের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় এতে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিতে পুরস্কার পাওয়া মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান প্রতিক্রিয়া জানান।
এবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তিনজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একজন, চিকিৎসাবিদ্যায় একজন, সংস্কৃতিতে একজন, ক্রীড়ায় একজন এবং সমাজসেবায় তিনজনকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ এ পদক দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন কাজী আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নঈম মো. নজিব উদ্দীন খাঁন (খুররম) (মরণোত্তর)।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে ড. মোবারক আহমদ খান, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এবং ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন, সমাজসেবা/জনসেবায় অরন্য চিরান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহ বাকী এবং এস এম আব্রাহাম লিংকন পুরস্কার পেয়েছেন।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ