গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত, তবে যারা রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে তাদেরকে সরকার নজরদারিতে আনতে চায় বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।
বৃহস্পতিবার (২ মে) ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ইউনেস্কো (ঢাকা অফিস ও রিজিওনাল অফিস-নিউ দিল্লী), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং আর্টিকেল নাইনটিনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো মনোভাব নেই সরকারের, সরকার কমিটেড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিতে। গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত। বরং আমাকেই অনেক সাংবাদিকরা নিবন্ধনহীন অনলাইনকে বন্ধ করার কথা বলে। গণমাধ্যম কর্মীদের তালিকা করতে বলে, কে কোথায় কাজ করে। আমরা কিন্তু সেটা করছি না। আমরা চাই একটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সবাই আসুক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুস্থ ধারার সাংবাদিকতা করতে কোনো বাধা নেই। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে যাতে আইনের অপব্যবহার না হয় সেব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। তথ্য-উপাত্তের বিপরীতে ডকুমেন্টস থাকে তার বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ নেই। গণমাধ্যমে স্বাধীনতা মানে কোনো নিজস্ব পারপাস সার্ভ করা নয়। আমরা পরিবেশকে সুরক্ষিত করতে চাই। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করার সব করব।
রামপাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। রামপাল ও আদানি নিয়ে দিনের পর দিন মিথ্যাচার হয়েছে। এটা যে ক্ষতিকর সেটা সত্যি নয়। আমরা আমাদের স্বার্থে এনটিএমসিকে বাংলাদেশে এনেছি।
তাদের ৭০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প করার অভিজ্ঞতা আছে। আমরা এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগ এনেছি। আমরা চেয়েছি পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিদ্যুতের উন্নয়ন। পুরোটাই বাংলাদেশের স্বার্থ। ওখানে ৫০-৫০ পার্টনারশিপ, লাভ যা হবে তাও ভাগ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গার্মেন্টন্স ও পাহাড়ি এলাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়। এটা সত্যি। সরকার সব সময় সমালোচনাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু সিস্টেমেটিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন যখন হয় আমরা সেটার বিরুদ্ধে। পরিবেশ বিপর্যয় কিংবা দুর্নীতি নিয়ে যেকোনো প্রতিবেদককে স্বাগত জানাই। আমি এখনো বলে যাচ্ছি, এই ধরনের সাংবাদিকতা রক্ষায় সঙ্গে আছি।
আইনের অপব্যবহার প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো আইনের যেন অপব্যবহার না হয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যে সব আইনের অপব্যবহারকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা রাখা উচিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যেমন আইন দরকার, তেমনি অপব্যবহার নিয়ে কথা বলা উচিত। শুধু গণমাধ্যম নয় যে কোনো আইনের অপব্যবহার নিয়ে গণমাধ্যমের কথা বলা উচিত।
সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের বিষয়টি গুরুত্ব থাকা উচিত। কোনটা খবর সেটা আগে বুঝতে হবে। যে তথ্য দেশের বিরুদ্ধে যায়, এমন খবর হতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই, আমাদের অবস্থান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা যাবে তাদের বিরুদ্ধে। মিডিয়া কি প্রভাবমুক্ত? আমাদের ডাবলস্টান্ডার্ড থেকে বের হতে হবে।
আএসএফ র্যাংকিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন আমি এটা কথা বলেছি। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৩ সালের মে মাসে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে ভুল তথ্য আছে এবং সেখানে বাস্তবতার প্রতিফলন ছিল না।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওয়েবসাইটে ভুল, অর্ধসত্য ও অপর্যাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৬৩তম দেখানো হয়েছে। এটা নিয়ে আমি চিঠি লিখেছি, তারা ভুল তথ্য ডিলিট করেছে। কিন্তু এরপর র্যাংকিং ঠিক করা হয়নি।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা শীর্ষক আলোচনা আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত হার এক্সেলেন্সি অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি ও অফিস প্রধান সুজান ভাইজ এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
নদী বন্দর/এসএইচ