মাঝ জ্যৈষ্ঠে দিনব্যাপী এমন বৃষ্টি প্রত্যাশা করেনি রাজধানীবাসী। যদিও ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানীতেও বৃষ্টি হবে এমনটা আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। সে অনুযায়ী ভোর রাত থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীতে ঝরছে বৃষ্টি। আর টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। সেইসঙ্গে আছে গণপরিবহন সংকট। এই সুযোগে রাজধানীতে বেড়েছে রিকশা, সিএনজি ভাড়া।
সোমবার (২৭ মে) বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বাড্ডা, গ্রিনরোড, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ২৭, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর, ১৩ নম্বর, ১৪ নম্বর, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, মোহাম্মদপুর, ইসিবি, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এতে করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নানাভাবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন রাজধানীতে কাজে বের হওয়া সাধারণ মানুষজন। এছাড়া অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ভ্যান দিয়ে সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে রাজধানীবাসীকে।
একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর সব সড়কেই সব ধরনের যানবাহনসহ গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। আর এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন ঢাকার রিকশা ও সিএনজি চালকরা।
এমন অভিযোগ জানিয়ে গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার বাসা মোহাম্মদপুরে। সকালে অফিসে আসার সময় খুব ভোগান্তিতে পড়েছিলাম। বৃষ্টির কারণে অনেক রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সড়কে বাস, গণপরিবহন কম।
যে কারণে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে রিকশাচালকরা। প্রথমে বাসা থেকে হয়ে ডাবল ভাড়ায় রিকশায় চড়ে মোড়ে এসেছি। পরে বাস না পেয়ে ঢাকার ডুবো রাস্তায় সিএনজিতে চড়ে গুলশানের অফিসে এসেছি। সেই সিএনজি ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। সেই ভাড়া আমার কাছ থেকে নিয়েছে ৪০০ টাকা। এরচেয়ে কমে কেউ আসবে না।
সকাল থেকে ঝোড়ো বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সকাল সকাল কাজে বের হওয়া রাজধানীর মানুষজন। রাজধানীর কিছু কিছু সড়ক, অলিগলিতে কিছুটা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় যাতায়াত, চলাফেরা, গণপরিবহনে উঠতে ভোগান্তি; সব মিলিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে মানুষজনকে।
রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ থেকে কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল হয়ে বাড্ডা এলাকায় আসা সুজন আহমেদ নামের একজন বলেন, যে রাস্তা দিয়ে সিএনজিতে চড়ে এসেছি তার বেশিরভাগ সড়কেই জলাবদ্ধতা দেখেছি। পথে পথে মানুষের ভোগান্তি।
পানির কারণে যানবাহন যাওয়ার পর ঢেউ আঁছড়ে পড়ছে সড়কে, ফুটপাতে। বাস না পেয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় সিএনজি করে আসলাম। যেহেতু মার্কেটিংয়ের চাকরি করি, তাই বৃষ্টি জলাবদ্ধতা হলেও কাজে বের হতে হয়। সে কারণেই আমরাই বুঝি বৃষ্টি, জলাবদ্ধতায় আজ কতটা বিড়াম্বনায় পড়েছেন কাজে বের হওয়া মানুষজন।
এদিকে রাজধানীর ডিএনসিসি এলাকায় কোথাও জলাবদ্ধতা হলে, পানি জমে থাকলে হটলাইনে যোগাযোগ করার (১৬১০৬) আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
একইসঙ্গে টানা বৃষ্টির কারণে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কুইক রেসপন্স টিম।
সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে ডিএনসিসির আওতাধীন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন।
তিনি জানান, ডিএনসিসির ১০টি কুইক রেসপন্স টিম এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে। কোথাও পানি জমে থাকলে ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬ এ ফোন করুন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছে যাবে।
নদী বন্দর/এসএইচ