সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা, কুশিয়ারাসহ সবকটা নদ নদীর পানি বাড়ছে। সব পয়েন্টে গড়ে ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বেড়েছে। কুশিয়ারা আগ থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে রোববার রাতে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে রোববার (৩০ জুন) আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৭২ ঘণ্টা ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত ২ জুন থেকে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। সোমবার (১ জুলাই) সকাল ৯ টায় নদীর ওই পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার।
পাউবো সূত্রে আরও জানা গেছে, রোববার রাতে সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। আজ (সোমবার) সকাল ৯ টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। এই সময়ে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৬ টায় নদীর ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১০ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার দিয়ে। মাত্র ৩ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৯ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
এদিকে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানিও গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে। গড়ে ৩/৪ সেন্টিমিটার করে বেড়েছে।
পাউবো সিলেটের কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটের সীমান্ত এলাকায় প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানির বাড়া-কমার বিষয়টি ভারতে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। সিলেটে কম বৃষ্টি হলেও ভারতের বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হয়।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে রোববার পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক ওঠেছেন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন নেই।
কুশিয়ারার পানি টানা ৩০ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপরে। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি টানা ২৮ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, দুটি নদীর পানি এসে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিলে। এতে অন্য নদ-নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারার পানি বাড়ে। একই কারণে পানি ধীরগতিতে নামে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানি ধীরগতিতে নামছে। তবে বৃষ্টি হলে ও পাহাড়ি ঢল নামলে পানির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, কুশিয়ারা নদীতে জুড়ী নদী ও শেরপুরের মনু নদের পানি এসে মিলিত হয়। একই নদীতে আরও দুটি নদীর পানি মিলিত হওয়ায় পানি বেড়ে যায়। ফলে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে সময় লাগে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত থাকায় এবার পানি ধীরগতিতে নামছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। আর আজ (সোমবার) সকাল ৬ টা থেকে ৯ টার মধ্যে হয়েছে রেকর্ড হয়েছে ৬৫ মিলিমিটার। আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
নদী বন্দর/এসএন