টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক, বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। পানিবন্দি হয়ে পড়া লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, পরশুরামে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুইটা ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারী বৃষ্টি ও উজানের অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে গত ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের ফলে লোকালয় প্লাবিত হয়েছিল। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানি আবার বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।
এতে পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ, মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুটি অংশ, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন, দক্ষিণ শালধর, কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়া এলাকার ভাঙন অংশ এবং পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
সূত্র আরও জানায়, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে দুই উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জুলাইয়ের বন্যায় আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে বড় লোকসান হয়েছিল কৃষকদের। এরপর ক্ষতি কাটিয়ে আবারো বীজ বুনেছে কৃষকরা। এখন সেই চারা তুলে রোপণের সময়। কিন্তু একমাসের ব্যবধানে তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়ে বীজতলা এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। দু’একদিনে যদি পানি না নামে তাহলে এবারের চারাও আর কাজে লাগাতে পারবে না কৃষকরা।
পরশুরামের বীরচন্দ্র নগর এলাকার বাসিন্দা মো. রহিম জানান, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘরবাড়ি তিনবার পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার সব মানুষ কষ্টে আছে। বাড়িঘর সব ডুবে গেছে।
ফুলগাজী উপজেলার নিলক্ষ্মী এলাকার কৃষক আকবর হোসেন বলেন, বন্যায় ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরি করে রোপণের কয়েকদিন পরে আবারও পানিতে ডুবে যায়। গত দুই দিনের ভারি বৃষ্টিতে এখন নতুন করে সব জমি পানিতে তলিয়ে আছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, গত বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। সেগুলো মেরামত করার আগেই গত দুই দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে ভাঙন অংশ দিয়ে আবারো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
এ বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় পরশুরাম উপজেলার পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুটি ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের কাছে আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। এখনও প্রবল স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলায় ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ টন চাল মজুত রয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
নদী বন্দর/এসএকে