1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
খুন, গুম, দূর্নীতি ও অবৈধ নির্বাচনের হোতা পানি সচিব এখনও বহাল - Nadibandar.com
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আইএমএফের ঋণের কিস্তিছাড় ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশা গভর্নরের বৈষম্যবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতনের অনুমতি চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন অস্থিরতা কাটাতে রাজনৈতিক ঐক্য দরকার: মির্জা ফখরুল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতি সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে শুধু ‘ভাসাভাসা নীতিগত’ আলোচনাই হয়: পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা ইসি নয়, সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা এনসিপির আ.লীগের বিচারসহ ৮ ইস্যুতে ঐকমত্য এনসিপি ও খেলাফত মজলিস রিজার্ভ বেড়ে ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি ‘চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে চায় বাংলাদেশ’
নদীবন্দর,ঢাকা:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ মার্চ, ২০২৫
  • ৩৬ বার পঠিত

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব ও সাতক্ষীরার তৎকালিন জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্বাচন, খুন, গুমে অংশ নেওয়াসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে নানাবিধ অনিয়ম ও দূর্নীতি, আওয়ামীকরণসহ এমন কোন কর্মকান্ড নেই যা তিনি করেননি। আওয়ামী শাসনামলের মতোই পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তার প্রভাববলয়ের মধ্যে রেখেছেন। 

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে প্রভাবশালী ৮ সচিবের একজন ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের এই সচিব। গণঅভ্যূত্থানের মধ্যে দিয়ে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার ছয় মাস অতিবাহিত হলেও নিষিদ্ধ সংগঠণ করা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা  ও শেখ হাসিনার দেশব্যাপী অবৈধ নির্বাচন পরিকল্পনাকারিদের অন্যতম এই সচিব নাজমুল আহসান এখনও বহাল তবিয়তেই পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানা যায়- আওয়ামী শাসনামলে তিনি এতটাই ক্ষমতাশালী ছিলেন যে, কোন আমলার আত্মীয় বিএনপি-জামায়ত করে সেসব খোঁজ খবর নিয়ে ওইসব আমলার তালিকা করে তাদের প্রমোশন আটকানো, ওএসডি করা, গুরুত্বহীন জায়গায় ফেলে রাখার দায়িত্বও পালন করেছে এই পানি সচিব। এতসব অপকরমের পরও কোন অদৃশ্য খুঁটির জোরে তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে অর্ধশতাধিক জামায়াত- শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী নিহতের নেতৃৃত্বে ছিলেন তৎকালিন পুলিশ সুপার চৌধুরি মঞ্জুল কবির ও ডিসি নাজমুল আহসান। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার আস্থাভাজন পুলিশ সুপার চৌধুরি মঞ্জুল কবিরও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। তবে বহাল তরবিয়াতে আছেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অবৈধ নির্বাচন ও খুন গুমে অংশ নেওয়া তৎকালীন ডিসি ও বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তিনি সাতক্ষীরার নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। ২৬ জানুয়ারী ২০১৬ পর্যন্ত তিনি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াত আমীর সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেকের বাড়ি বুলড্রোজার দিয়ে ভাঙ্গার নির্দেশনা তিনিই দিয়েছিলেন। তার সময়ে সাতক্ষীরাতে সবচেয়ে বেশি হত্যা, খুন,গুম ও গ্রেফতারের শিকার হন বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীরা। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়াও দূর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তার অনিয়ম, দূর্নীতি ও জ্ঞাত আয়বহিভূত সম্পদ নিয়ে তদন্তে নেমেছে।

জানাযায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সুবিধাভোগী আমলা। শেখ হাসিনার সরকারের সময় যে কয়জন আমলা বেশি সুবিধা ভোগ করেছে তার মধ্যে নাজমুল আহসান অন্যতম। শেখ হাসিনার আর্শীবাদপুষ্ট নাজমুল আহসান সাতক্ষীরা এবং খুলনা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে সিনিয়র সহকারি সচিব, উপসচিব ও যুগ্মসচিব হিসাবে এবং বিদ্যুৎ বিভাগে উপসচিব ও যুগ্মসচিব হিসাবে কাজ করার সময় ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

অভিযোগ রয়েছে, কোটি-কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন নাজমুল আহসান। এর আগে পেট্রোবাংলা’র পরিচালক (প্রশাসন) হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময় পেট্রোবাংলা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, ত্রাণের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্নভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । রয়েছে  নিজের লোকদের কাজ দিয়ে কমিশন খাওয়ারও অভিযোগ। নাজমুল আহসান সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময়  বিএনপি-জামায়াত দমনে নেতৃত্ব দেন। তিনি জেলা প্রশাসককে আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানিয়েছিলেন। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন এ কর্মকর্তা সচিবালয়ে বসে নানা ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। 

সূত্র জানিয়েছে, নাজমুল আহসান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন। তার এই অবৈধ সম্পদ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন স্ত্রী ইশরাত জাহান। নামে বেনামে এই দম্পতির অঢেল সম্পদ রয়েছে। টাকা ছাড়া কখনই কোনো ফাইল সই করেননি নাজমুল আহসান।

পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে বড় বড় প্রকল্পেও তার অনিয়ম ও দূর্নীতির ছোঁয়া রয়েছে। তদুপরি তিনি একচেটিয়া নিয়োগবাণিজ্য করেছেন। তার এই নিয়োগ বানিজ্যের দোসর হিসাবে কাজ করেছে সম্প্রতি ওএসডি হওয়া সাবেক এডিজি (প্রশাসন) ওজিওর রহমান। এছাড়াও তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডে সাবেক বঙ্গবন্ধু পরিষদের কোন কোন কর্মকর্তার যোগসাজশে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। 

নাজমুল আহসান সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দানের ৫দিন পর ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন আগরদাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির জনপ্রিয় নেতা মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৪৫)। ৩০ ডিসেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যৌথবাহিনীর ৭-৮ জন সদস্য একটি মাইক্রোবাসে করে সাংবাদিক পরিচয়ে বিএনপি নেতা স্থানীয় চেয়ারম্যান আনোয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া বাড়ি-ঘরের ছবি তুলতে থাকে। সাংবাদিক আসার খবর শুনে আনোয়ারুল ও তার ভাইসহ বেশ কয়েকজন বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এক পর্যায়ে তারা আনোয়ারুলকে জোর করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওইদিন দুপুরের দিকে আনোয়ারুলের গুলিবিদ্ধ লাশ শিকড়ির একটি কলাবাগানের মাঠে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন।

গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা দেবহাটা উপজেলার নতুন বাজারের কুলিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আবুল কালাম (১৭) গ্রেফতার করে। একইদিন দুপুরে কুলিয়া এলাকার জামায়াত নেতা কস্ফারী আশরাফুল ইসলামের ছেলে জামায়াত কর্মী মারুফ হাসান ছোটনকে (২২) তার শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর দুজনকে দেবহাটা থানায় নিয়ে যায়। এর দুদিন পর ওই দু’জনের গুলিবিদ্ধ লাশ হাসপাতাল থেকে পুলিশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

২০ জানুয়ারি ২০১৪ স্বয়ং স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দেন। সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে এক ঝটিকা সফরে এসে নাজমুল আহসান বলেন, “আমি আপনাদের এই বলে আশস্ত করতে চাই, সাতক্ষীরায় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ থাকবে না। সে জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে। যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।” তিনি বলেন,”বিএনপি-জামায়াতের কারণে দেশে যে সহিংসতা, মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির‌্যাতন-নিপীড়ন চলছে, তা কোনো অবস্থায় মেনে নেওয়া হবে না। বিএনপি জামায়াত কর্মীরা বাংলাদেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের খুঁজে খুঁজে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।”

নাজমুল আহসানের সময়ে শুধু সাতক্ষীরা জেলাতেই রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ২৭ জন। এদের সবাই স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। এছাড়া আরও ২৫ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক ব্যক্তি। 

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে সচিব পদে নাজমুল আহসান কিভাবে এবং কাকে ম্যানেজ করে  বহাল তবিয়তে রয়েছেন- তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে চারিদিকে।

নদীবন্দর/এসএইচবি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com