চার দিনের সফরে আগামী ২৬ মার্চ চীন যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ২৮ মার্চ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে তার।
“২৬ মার্চ বিকালে প্রধান উপদেষ্টা চীনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। ২৭ মার্চ তিনি বক্তৃতা করবেন বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া অ্যানুয়াল কনফারেন্সে।”
মুখপাত্র বলেন, এদিন বিকালে চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।
এরপর ২৯ মার্চ সকালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ইউনূস। দেশে ফিরবেন ওই দিন রাতেই। পরে সংবাদ সম্মেলন করে সফরের বিস্তারিত জানানো হবে।
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারত সরকারের আশ্রয়ে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের একটি বড় অংশও প্রতিবেশী দেশটিতে অবস্থান করছেন।
ভারতের সরকার ও রাজনীতিকদের সঙ্গে বেশ উষ্ণ সম্পর্ক রাখা শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনাবসানের পর ক্ষমতায় এসেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পালাবদলের ধাক্কায় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন এবং নানা ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ঘিরে দিল্লির সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে বাংলাদেশের নতুন সরকারের।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
একইসঙ্গে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ‘গুম-খুন’ এবং শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ এনে সেগুলোর বিচারের কথাও বলা হচ্ছে। এর মধ্যে একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি।
এছাড়া দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন বলে অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচারের অভিযোগও বাংলাদেশ সরকার করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত সরকার।
বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে কূটনীতিক তলবের পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটেছে।
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, কেবল তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা ইতোমধ্যে দিয়েছে ভারত।
নয়াদিল্লি বলেছে, বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে সব সমস্যার সমাধান চায় ভারত।
ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে অবসান হয়েছে শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের।
যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে তার সরকারের পতন হয়েছে, সেই উত্তাল সময়ে বেইজিং সফর করে ফিরেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এরপর বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসা ইউনূস সরকারকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্ক গভীর করতে মনোযোগ দিয়েছে চীন সরকার। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে চীনে দ্বিপক্ষীয় সফর করে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
নদীবন্দর/ইপিটি