প্যাডল সুইপ করা বলটি ফাইন লেগে যেতেই নিশ্চিত হয়ে গেল সেঞ্চুরি, এক রান পূরণ করেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সেই বলে সুযোগ ছিল দ্বিতীয় রান নেয়ার, নিলেন সেটিও। এটিই যেন ভালো হলো, সেঞ্চুরির পূর্ণ উদযাপনটা নিজেদের ড্রেসিংরুমকে সামনে রেখেই করতে পারলেন মিরাজ।
হেলমেট খুলে, দুই হাত উঁচিয়ে মুখে বড় হাসিতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি উদযাপন সারলেন তিনি, ভোলেননি শুকরিয়া সিজদাহ দেয়ার কথাও। নিঃসন্দেহে তখন বিশ্বের অন্যতম সুখী মানুষটির নামই মেহেদি মিরাজ। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পাশাপাশি দলের সংগ্রহটা দারুণ অবস্থানে পৌঁছে দেয়ার পর আনন্দের আতিশয্য যে তারই মানায়।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিল সাদমান ইসলাম এবং সাকিব আল হাসানের সামনে। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করার পর তারা বেশিদুর এগুতে পারেননি। সাদমান আউট হয়েছেন ৫৯ রানে এবং সাকিব আউট হয়েছেন ৬৮ রানে। তবে, ২৬ মাস পর হাফ সেঞ্চুরি করে আর থেমে থাকেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। অসাধারন ব্যাটিং করে নিজের ইনিংসকে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত তিন অংকের ঘর ছোঁয়ালেন বাংলাদেশের এই অফস্পিন অলরাউন্ডার।
ব্যাট করতে নেমেছেন আট নম্বরে। এই জায়গা থেকে সেঞ্চুরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু মিরাজ সেটা করে দেখিয়েছেন। ক্যারিবীয় বোলারদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ১৬০ বল খেলে সেঞ্চুরি করেন মিরাজ।
মিরাজ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ইনিংসের ১৪৮তম ওভারে। জোমেল ওয়ারিকানের করা সেই ওভারের শুরুতে মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৯৩ রানে। প্রথম বলেই চার মেরে পৌঁছে যান ৯৭ রানে, পরের বলে নেন আরও ২ রান। সেঞ্চুরির জন্য তাড়া দেখাননি, তৃতীয় বল খেলেন ডট। চতুর্থ বলে প্যাডেল সুইপ করেই পৌঁছে যান ম্যাজিক ফিগারে।
বাংলাদেশের পক্ষে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আট নম্বর বা তার নিচে নেমে টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন মিরাজ। তার আগে মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ পাইলট, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আবুল হাসান রাজু ও সোহাগ গাজীদের রয়েছে এ কীর্তি। তাদের পাশে নিজের নাম বসিয়ে দলীয় সংগ্রহটাও ৪৩০ রানে নিয়ে গেছেন ২৩ বছর বয়সী এ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
আজ (বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরে লিটন দাস, তখনও নতুন থাকা বল হাতে আক্রমণে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল- মিরাজের জন্য চ্যালেঞ্জটা ছিল বেশ কঠিন। তবে গ্যাব্রিয়েলের মুখোমুখি তৃতীয় বলে বাউন্সার ডেলিভারিতে দারুণ দক্ষতায় পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে চার মেরে লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তত ঘোষণা করেন মিরাজ। যা ধরে রেখে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি।
লিটন আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৮ রান। আড়াইশর আগে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলায় দলীয় সংগ্রহটা বড় করার একটা চাপও ছিল মাথার ওপর। অপর প্রান্তে সাকিব আল হাসান ছিলেন সাহস দেয়ার জন্য। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। এ জুটিতে ভর করেই বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় ৩০০ রানের কোটা।
পরে সাকিব ৬৮ রান করে আউট হলেও তাইজুল ইসলাম, নাইম হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানদের নিয়ে শেষ তিন উইকেটে ১১৫ রান যোগ করেন মিরাজ। ব্যাটিংয়ে নেমে মিরাজ শুরু থেকেই খেলতে থাকেন রানের চাকা সচল রেখে। জোমেল ওয়ারিকানকে সুইপ কিংবা কেমার রোচের ফুল লেন্থের ডেলিভারি অনড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের জানান দিয়েছেন তিনি।
ইনিংসের সেরা শট ছিল ইনিংসের ১১৭তম ওভারে। ওয়ারিকানের মিডল-লেগস্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে ইনসাইড আউট শটে এক্সট্রা কভার দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে। বিরতির পর ফিরে কর্নওয়ালের ওভারে প্রথমে থার্ড ম্যানে ৩ রান নিয়ে পৌছান ৪৯ রানে, পরে ফাইন লেগ দিয়ে ২ রান নিয়ে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি।
বাংলাদেশ ইনিংসের ৯৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটে গিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ আউট হয়েছেন ১৫১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে। মাঝের ৫৮ ওভারে বাংলাদেশ দল পেয়েছে ১৮২ রান, যেখানে মিরাজের একার অবদান ১০৩ রান।
প্রায় পৌনে ৪ ঘণ্টা উইকেটে থেকে ১৬৮ বল মোকাবিলা করে ১০৩ রানের ইনিংসটি খেলেছেন মিরাজ। যেখানে ছিল ১৩টি চারের মার, ছিল না কোনো ছক্কা। শেষপর্যন্ত অবশ্য আউট হয়েছেন ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই। রাহকিম কর্নওয়ালের বলে ধরা পড়েছেন লংঅনে দাঁড়ানো কাভেম হজের হাতে।
নদী বন্দর / পিকে