1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে জিম্মি মাদারীপুরের অর্ধশত যুবক - Nadibandar.com
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪০ অপরাহ্ন
নদীবন্দর,মাদারীপুর
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

মাদারীপুর জেলার অন্তত ৫০ জন যুবক লিবিয়ায় পাচার হয়ে মানবপাচারকারীদের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতালিতে পাড়ি দেওয়ার আশায় বাড়ি ছেড়ে যাওয়া এই যুবকদের অনেকেই মাসের পর মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

ভুক্তভোগীদের পরিবার জানিয়েছে, ইতালি যাওয়ার প্রলোভনে ফেলে স্থানীয় এক দালালচক্র তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠায়। মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে মাদারীপুরের শিবচরের ইসলামি ব্যাংক এজেন্ট আবুল কালাম মুন্সির নাম, যিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন এবং ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘আমার ভাই সোহাগ মোল্লাকে সরাসরি ইতালি নেওয়ার কথা বলে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি হয়,’ বলেন শিবচরের দক্ষিণ চরকামারকান্দি গ্রামের প্রবাসী মাসুদ মোল্লা। ‘তাকে প্রথমে শ্রীলঙ্কা, পরে মিশর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায় পাচারকারীরা। সেখানে নির্যাতনের মুখে পড়ে পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় ৪৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। টাকা দেওয়ার পরেও আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই।’

আরেক ভুক্তভোগী বিএম রুবেল বলেন, তার ভাই সোহেল আহমেদ ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দালাল আবুল কালাম মুন্সির মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরে তাকে লিবিয়ায় আটকে রেখে ৫১ লাখ টাকার বেশি মুক্তিপণ আদায় করা হয়।

‘এই টাকা আমরা জমি বিক্রি ও সুদে ঋণ নিয়ে জোগাড় করেছি,’ বলেন রুবেল। ‘মোস্ট অফ দ্য পেমেন্ট ওয়েন্ট থ্রু ইসলামি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেল। এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিচ্ছে পাচারকারী চক্র।’

পুলিশ জানিয়েছে, মানবপাচার ও অর্থপাচার আইনে পৃথক তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

‘এই মামলার তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডি,’ বলেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শেখ সাব্বির হোসেন। ‘মানি লন্ডারিং আইনেও তদন্ত হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের হয়রানি করা হলে তা তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, আবুল কালাম মুন্সি ইসলামী ব্যাংকের একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন এবং দীর্ঘদিন ধরেই পাচার কার্যক্রমে জড়িত। তাঁর বাড়ি শিবচরের ‘লপ্ত সরকারের চর’ গ্রামে হলেও বর্তমানে তিনি পলাতক। মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে এবং বাড়িতেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে পরিবারগুলো সন্তানদের নিরাপদে ফেরত পাওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

‘আমরা চাই আমাদের ভাইদের ফেরত আনা হোক এবং এই দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক,’ বলেন মাসুদ মোল্লা। তারা শুধু আমাদের টাকা নয়, আমাদের জীবন ধ্বংস করেছে।’

বাংলাদেশে মানবপাচার একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে ইউরোপে অবৈধ পথে অভিবাসন নিতে গিয়ে বহু মানুষ লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়ছে, বা মারা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার নিরাপদ অভিবাসনের ওপর জোর দিলেও পাচারকারীদের দমন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

নদীবন্দর/এএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com