মুন্সিগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে থেমে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কায় দুই নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন একই পরিবারের সদস্য ও বাকি দুজন নিহতদের নিকটাত্মীয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—সামাদ ফকির (৬০), তার ছেলে হাফেজ বিল্লাল (৪০), সামাদ ফকিরের মেয়ে আফসানা (২০) ও অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহবুব (৪০)। আহতরা হলেন—শারমিন আক্তার (২৭), তার মেয়ে তাসকিয়া (৩) ও তার ভাগ্নি মারিয়াম (৭)।
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিলো। পথে সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকায় চাকা ফেটে যায়। এরপর মহাসড়কের পাশে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে চাকা মেরামত করা হচ্ছিলো। এ সময় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস পেছন থেকে অ্যাম্বুলেন্সকে ধাক্কা দেয় এবং দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্স আরোহীদের চাপা দেয়। এতে অ্যাম্বুল্যান্সের এক নারী আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে মৃত্যু হয় আরও চারজনের।
দুর্ঘটনায় আহতরা জানান, তাদের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মিঠাপুকুর এলাকায়। বিল্লাল ফকিরের স্ত্রী রোজিনা বেগম (৩০) অন্তঃসত্ত্বা। চলতি মাসের ২৩ তারিখ তার বাচ্চা প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ। তবে গতরাত থেকে তার ব্যাথা হচ্ছিল। এ জন্য সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাতে পরিবারটির ১০ জন মিলে ঢাকার পথে আসছিলেন। ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার কথা ছিল।
অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের নীমতলা এলাকায় আসার পরে চাকা ব্লাস্ট হয়ে যায়। এরপর রাস্তার ডান পাশে চাপিয়ে সেটির চাকা মেরামত করছিলেন চালক। আর তারা কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে বসেছিলেন, আর কয়েকজন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তারা আরও জানান, মেরামত প্রায় শেষের দিকে, এ সময় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাস পেছন থেকে এসে সজোরে অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে আফসানার মৃত্যু হয়।
এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ও বাহিরে থাকা আরোহীরা গুরুতর আহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে গুরুতর আহতদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। তবে প্রাথমিকভাবে অন্তঃসত্ত্বা নারীর সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ জানান, ঘটনাস্থলে নিহত একজনের মরদেহ হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এছাড়া আহত অবস্থায় ঢাকায় পাঠানোর পর যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে পরিবারের স্বজনদের কাছে।
এদিকে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বাস ও অ্যাম্বুলেন্সটি। এ ঘটনায় যাত্রীবাহী বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ। তবে দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেল্পার।
নদীবন্দর/জেএস