মাঘের কনকনে শীতে হিমেল হাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে আছেন বুড়িগঙ্গার ঘাট মাঝিরা। মৃদু বাতাস আর ভোর বেলার ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত মাঝিদের জীবন। বৈঠা হাতে নিয়ে অবিরাম ছুটে চলা এই মাঝিদের অর্ধেকেরও বেশি বসবাস করেন নৌকায়। রাত গভীর হলেই বৈঠা থেমে যাওয়ার পর নৌকার মধ্যে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করেন অনেকেই। তখনই শুরু হয় শীতের তীব্র যন্ত্রণা। শীত মৌসুমে শহরের অন্যান্য অসহায় মানুষগুলো সাহায্য পেলেও এমন বৈরী পরিবেশে শীতার্ত মাঝিদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। গোটা বুড়িগঙ্গায় একটি কম্বলের জন্য হাহাকার চলছে।
বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের রহমত মাঝি জানান, আমাদের আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই। নৌকায় থাকি, নৌকায় ঘুমাই। শীতে অনেক কষ্ট পাচ্ছি। রাতের বেলা ঠান্ডা লাগে বেশি, বাতাসের সাথে নৌকাও দুলতে থাকে। তখন আরো বেশি কষ্ট হয়।
তিনি আরো বলেন, এই শীতের মৌসুমে আমাদের কেউ কোনো কম্বল বা শীতবস্ত্র দেয় নাই। গত তিন বছর আগে একবার কম্বল পাইছিলাম এখন পর্যন্ত আর পাই নাই।
বাবুবাজার ঘাটের রফিক উদ্দীন মাঝি বলেন, ‘প্রতিবছর শীতেই অবস্থা খুব খারাপ থাকে। আমরা যামু কার দারে, আমাদের কেউ কিছু দেয়না। প্রতিদিন নৌকার মালিককে টাকা দিতে হয় এছাড়াও ঘাট মালিককেও টাকা দিয়ে আর খাওয়ার মতো টাকাও থাকে না। শীত নিবারণ করার মতো কোনো কিছু কিনতে পারি না। আমাগো দিকে তাকানোর মতো কেউ নাই।’
এভাবে কষ্টের কথা জানান বুড়িগঙ্গার ভাসমান মাঝিরা। তীব্র শীতে এই অসহায় মানুষগুলোর প্রতি তাকায়নি কেউ। সামর্থবানদের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
ঘাট মালিকরা জানান, আমাদের কিছু করার নেই। নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সাহায্য আসে না। স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাইলে কিছু সহযোগিতা করতে পারেন। কিন্ত মাঝিদের সাহায্য করার কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় না।
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী বলেন, আসলে এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। সরকার যদি তাদের জন্য কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখতো তাহলে আমরা চেষ্টা করতাম। তাদের জন্য কোনো বাজেট নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে ভালো হবে।
নদী বন্দর / এমকে