রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে বুধবার সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর জাপানের উপকূলে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সুনামির ঢেউ লক্ষ্য করা গেছে।
দেশটির জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য উপকূলীয় এলাকা এবং নদী থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর জাপান টাইমসের।
রাজধানী টোকিওসহ উপকূলীয় ও উপকূলের কাছের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাপান।
দেশটির আগুন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২১টি প্রিফেকচার বা প্রশাসনিক অঞ্চল থেকে মোট ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৬ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ সরানো হচ্ছে হোক্কাইডো, কানাগাওয়া ও ওয়াকায়েমা দ্বীপ থেকে।
বুধবার ভোরের দিকে রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের অঞ্চল কামচাটকায় ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প এবং তার পর ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ‘আফটার শক’ হয়।
সেই ভূমিকম্পের পর ৪ মিটার (১২ ফুট) উচ্চতার ঢেউ এসে আঘাত হানে জাপানের সর্বউত্তরের দ্বীপ হোক্কাইডোতে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল হোক্কাইডো এবং হোনশুতে ৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের পূর্বাভাস দিয়ে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে, পাশাপাশি শিকোকু, কিউশু এবং ওকিনাওয়াতে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
জাপানের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সুনামি দীর্ঘ সময় ধরে বারবার আঘাত হানতে পারে। প্রথম ঢেউয়ের পরে আসা ঢেউগুলি আরও বড় হতে পারে, তাই সুনামির সতর্কীকরণ বা সতর্কতা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সরে যাওয়া প্রয়োজন।
প্রতিটি ঢেউয়ের সময়কাল খুব দীর্ঘ, যার অর্থ একটি একক ঢেউ চক্র অতিক্রম করতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগতে পারে, তাই দীর্ঘ সময় ধরে সুনামির কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
উচ্চ সুনামির ঢেউয়ের ঝুঁকি কমপক্ষে একদিন ধরে চলতে পারে, যদিও সতর্কতা কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা এখনও মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
জাপানের উপকূলে প্রথম দফার ঢেউ আসার দুই ঘন্টারও বেশি সময় পরে, স্থানীয় সময় দুপুর ১টার কিছু পরে ইওয়া প্রিফেকচারের হোক্কাইডো এবং কুজিতে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ লক্ষ্য করা গেছে।
হোক্কাইডো থেকে মিয়াজাকি পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ১০ সেন্টিমিটার থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে জারি করা হয়েছে সুনামি সতর্কতা।
জাপানের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাজধানী টোকিওসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে আঘাত হেনেছে সুনামির ঢেউ, তবে যতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা তারা করেছিলেন, বাস্তবে ততটা হয়নি।
সুনামির প্রভাবে বর্তমানে জাপানের পর্ব উপকূলে যেসব ঢেউ উঠছে, সেগুলোর উচ্চতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটারের মধ্যে।
তবে সুনামির ধাক্কায় জাপানের পরিবহন ব্যবস্থা এলোমেলো হয়ে পড়েছে। জাপানের প্রশান্ত মহাগারের তীরবর্তী বিমানবন্দর সেন্দাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট তার যাবতীয় অপারেশন বন্ধ করেছে। স্থগিত করা হয়েছে হোক্কাইডো, ওমোরি এবং টোকিও’র মধ্যে ফেরি চলাচল ব্যবস্থাও।
নদীবন্দর/জেএস