‘দেশের জনগণের জীবন উন্নয়ন করাই বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি’ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা মনে করি জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা যত দ্রুত তার সাথে সম্ভব আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করব।’
সোমবার (০৪আগস্ট) বিকেলে জাতীয়তাবাদী যুব দলের এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একথা বলেন। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে জাতীয়তাবাদী যুব দলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যুব দলের নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যদের সন্মাননা প্রদান করা হয়। চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকার পাঁচটি স্থানে আঁকা গ্রাফিতির ওপরে তৈরি একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। জুলাই-অভ্যুত্থানের ওপর কবিতা আবৃত্তি করেন নাসিম আহমেদ।
তারেক রহমান বলেন, কথামালার রাজনীতি মানুষ আর চায় না। পরিস্কারভাবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি যেমন বুঝি, এখানে প্রত্যেকটি মানুষ অনুধাবন করেন বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায় এখন। আর স্বপ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি নয়, জনগণ এবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায়। বিএনপি জনগণের সেই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়ন করছে… চেষ্টা করছে। আমাদের আমাদের নেতা-কর্মী, আমাদের দলের ভেতরে দলের বাইরে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছি, কাজ করছি।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের আগামী দিনের নীতি জনগণের জীবন উন্নয়নের রাজনীতি। দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এটিই হবে আমাদের রাজনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য। তবে সারাদেশে জনগণের কাছে বিএনপির পরিকল্পনাগুলো পৌঁছিয়ে দিতে হবে। আপনি যে শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাস করেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যে নেত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছেন আপনাদের সকলের দায়িত্ব আমাদের এই পরিকল্পনাগুলো জনগণের সামনে তুলে জনগণের কাছে নিয়ে যাবেন। কারণ জনগণের রায় আমাদের প্রয়োজন, জনগণের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন, জনগণের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন মানুষের জন্য নেওয়া এই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নের জন্য।
তারেক রহমান তার দীর্ঘ বক্তব্যে যুব সমাজের কর্মসংস্থানে কি কি করণীয় তার একটি বিস্তারিত পরিস্কল্পনার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের কথাও বলেন।
যুবদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনে যুবদলের নেতাকর্মীরা নির্যাতন, নিপীড়ন উপেক্ষা করেও রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের শত নির্যাতনে, নিপীড়নেও যুবদল পিছিয়ে যায়নি রাজপথ ছেড়ে যায়নি। শুধুমাত্র জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যুবদলের ৭৮ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে।জনগণ আপনাদের সঙ্গে ছিল আপনাদের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ছিল এ কারণেই আপনারা সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছেন। আপনাদের প্রতি জনগণের সেই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখুন। মনে রাখবেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনি নেতা, জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে আপনি নেতা নন।
দীর্ঘ কয়েক দশকে দলীয় কার্যক্রমের নীতিনির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতার প্রতি ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমার কয়েক দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বিষয় আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। কি সেটি? পলাতক স্বৈরাচারের প্রশাসন কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদেরকে যুবদলের নেতাকর্মী সমর্থকদেরকে রাজপথ থেকে দূরে রাখতে পারেনি সুতরাং আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান জনগণের আস্থায় থাকুন জনগণকে সঙ্গে রাখুন।’
জাতীয়তাবাদী যুব দলের সভাপতি এম আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মেহেদি আমিন, মানবাধিকার কর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ, যুব দলের রবিউল ইসলাম নয়ন, দীর্ঘদিন গুম হয়ে থাকা অ্যাডভোকেট সোহেল রানা, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সায়েম আল মনসুর ফয়েজী, শহীদ মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে আপন, ইয়াহিয়া আলীর মেয়ে তাইয়েবা খাতুন, হাফিজুর রহমান সুমনের স্ত্রী বিধী আখতার, নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আখতার নেহা, আহত কর্মী আমিনুল ইসলাম ইমন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে যুবদলের সাবেক নেতৃত্ব গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাইফুল আলম নিরব ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু উপস্থিত ছিলেন।
নদীবন্দর/ইপিটি