গত শনিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করলেও, রবিবার সকাল থেকে পানি কমে গিয়ে তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ৯টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে পানি কমলেও তিস্তা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, আবারও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে পানি কিছুটা কমলেও, বন্যা এলাকার তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কাটেনি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে অনেকেই তাদের গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। শুকনো খাবার মিললেও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
এছাড়া, বিপুল পরিমাণ আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চরের কৃষক গফুর মিয়া (৬৫) জানান, এখনও চরের ফসলি জমি পানির নিচে রয়েছে। প্রতি বছর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দেয় এবং নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের কারণে হঠাৎ করে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ভেলা এখন একমাত্র চলাচলের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, উজানের ঢল কিছুটা কম থাকায় মঙ্গলবার সকালে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি স্থিতিশীল রয়েছে।
পানি ধীরগতিতে নামায় নদীসংলগ্ন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন হায়দারিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম জানায়, ‘স্কুলে গিয়েছিলাম, কিন্তু ক্লাসরুমে পানি থাকায় বাড়িতে ফিরে এসেছি।’
মহিষখোচা ইউনিয়নের বালাপাড়া ও কলতারপাড় গ্রামের শিক্ষক দবিয়ার রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় আমাদের ক্লাস করাতে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে।’
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার জানান, রোববার তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে ছিল। তবে সোমবার থেকে তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র সোমবার বিকেলে জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি আগামী দুই দিন সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী এক দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে, আর ধরলা ও দুধকুমার নদীগুলোর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা ও উক্ত নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গাইবান্ধা জেলার সংশ্লিষ্ট নিম্নাঞ্চলও সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ. এম. রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
নদীবন্দর/জেএস