লালমনিরহাটে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া তিস্তার পানি আজ কমতে শুরু করেছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ৯টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। শনিবার সকাল ৬টায় হাতীবান্ধার তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৯টার দিকে পানি কমে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
আবহাওয়া অফিস জানায়, উজানে পানির সমতল হ্রাস পাওয়ায় শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায় ও পরবর্তীতে স্থিতিশীল থেকে হ্রাস পেতে পারে। তবে এই অববাহিকায় আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে পানি সমতল পুণরায় বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে ওই সময়ে বন্যা ঝুঁকি রয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের ফলে নদীতে পানির প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়। রাতে পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। ডুবে গেছে আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর। সড়কপথ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এখন নৌকা ও ভেলা হয়ে উঠেছে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।
এদিকে, জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বেশ কিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী; সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়ন। এবারের উজানের ঢলের সৃষ্ঠ বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়লে বন্যার পরিধিও বাড়বে। পানি প্রবেশ করবে নতুন নতুন এলাকা। এবার তিস্তা নদীতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো বন্যা হয়নি। এটি বন্যায় রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।
তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তি অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার বলেন, শুক্রবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও নিম্নাঞ্চলে সতর্কতা জারি রয়েছে। দুই-তিন দিন এই পরিস্থিতি স্থায়ী থাকতে পারে। তবে পানি আর বাড়বে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
নদীবন্দর/ইপিটি