বিশ্বব্যাপী দ্রুত বাড়তে থাকা হালাল পণ্যের বাজারে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ নিজ দেশে পূর্ণাঙ্গ হালাল শিল্প পার্ক গড়তে চায়। এ লক্ষ্যে মালয়েশিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দেশটির হালাল শিল্প–বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা এ বিষয়ে একসঙ্গে পদক্ষেপ নিই।’
মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হালাল বিষয়ক সমন্বয়কারী দাতিন পাদুকা হাজাহ হাকিমা বিন্তি মোহাম্মদ ইউসুফ, ইসলামিক উন্নয়ন মালয়েশিয়ার (জাকিম) মহাপরিচালক সিরাজউদ্দিন বিন সুহাইমি এবং হালাল উন্নয়ন করপোরেশনের (এইচডিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাইরোল আরিফিন সাহারি।
বৈঠকে মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বাজারে মালয়েশিয়া এখনই অন্যতম বড় অংশীদার। দেশটি ১৪টি হালাল শিল্প পার্ক পরিচালনা করছে এবং নিজস্ব মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হালাল শিল্পের এই বিশাল সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশ করতে হলে দেশের হালাল অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে হালাল সার্টিফিকেশনের অনুমোদিত একমাত্র সংস্থা হলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ পর্যন্ত মাত্র ১২৪টি প্রতিষ্ঠান হালাল সার্টিফিকেট পেয়েছে, যা বৈশ্বিক বাজারের তুলনায় খুবই কম।
বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে কাজ করে হালাল শিল্প পার্ক গঠনে কী কী প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করতে পারি। অনেক বাংলাদেশি কোম্পানি হালাল সার্টিফায়েড পণ্য রপ্তানিতে আগ্রহী।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই বৈঠককে গভীর ও শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটা যেন হালাল পণ্যের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ ক্লাসে অংশ নেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা ছিল। এই অন্তর্দৃষ্টির জন্য ধন্যবাদ।
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া হালাল খাতে সহযোগিতার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে ‘হালাল কূটনীতি’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার জাকিম প্রধান সিরাজউদ্দিন বিন সুহাইমি বলেন, মালয়েশিয়া শিগগিরই বাংলাদেশে একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল পাঠাবে, যারা এসে হালাল শিল্প পার্ক গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণে কাজ করবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ।
নদীবন্দর/জেএস