দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও জনদুর্ভোগ বিবেচনায় এবং বিদ্যুৎ উপদেষ্টার প্রতি আস্থা রেখে গণছুটি কর্মসূচি স্থগিত করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে যোগদানের অনুরোধও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎ এসোসিয়েশন।
বক্তারা বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান গণছুটি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা দেশবিরোধী শক্তি নই, সেটা প্রমাণের জন্য গতকাল বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আহ্বান জানান। কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের বিষয়ে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকারের উপর আস্থার প্রতিফলন দেখতে পাবো।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের আন্দোলনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কখনোই বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক সেবা বন্ধ রাখেনি। বিদ্যমান গণছুটি কর্মসূচিতে ৮০টি সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উপকেন্দ্রগুলো চালু রাখা হয়েছে।’
‘বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় আরইবি কর্তৃক বারবার ভুল তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে বিভ্রান্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা উপেক্ষা করে আমাদেরকে দেশবিরোধী শক্তি, নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রকারী ইত্যাদি ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত।’
‘যারা রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৪ কোটি মানুষের ঘর আলোকিত করে, তাদেরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করা অভিপ্রেত নয়।’
‘আরইবি-পিবিএস সংস্কারের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের বিদ্যুৎ বৈষম্য দূর করে মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবার লক্ষ্যে একটি টেকসই বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেম বিনির্মাণে আমরা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছিলাম। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার বিভিন্ন সময়ে একাধিক কমিটি গঠন করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অসহযোগিতার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুঃশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় মামলা, চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত, সংযুক্তসহ নানা ধরনের দমন-পীড়ন।’
‘গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে ১৬ দিনব্যাপী আন্দোলনের পর বিদ্যুৎ বিভাগের লিখিত আশ্বাসে ৫ জুন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ১৭ জুন বিদ্যুৎ বিভাগ দুটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করেছি, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে হয়রানি এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আন্দোলনের কারণে এখন পর্যন্ত ১৭২ জনের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, ২০ জন কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন জেল খাটানো, ৪০ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত, ৮৭ জনকে বরখাস্ত ও সংযুক্ত, সাড়ে ৬ হাজার জনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।’
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর চার দফা দাবিতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরদিন থেকে তারা এই কর্মসূচি পালন শুরু করে।
পরে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি দেয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে না ফিরলে, তাদেরকে স্থায়ী ছুটিতে পাঠানো হবে। এর কয়েক ঘণ্টা না যেতেই স্থগিত হলো গণছুটি কর্মসূচি।
নদীবন্দর/এএস