জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়া হলে মামলা না করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি। এমন ঘোষণার জন্য মান্নার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে এনসিপি।
পোস্টে মান্না লিখেছেন, ‘আমাকে যদি জাতীয় প্রতীকের কারণে শাপলা না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কাউকে দিতে পারে না। ওরা (এনসিপি) আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়স, অভিজ্ঞতা এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদী। শাপলা প্রতীক যদি তাদের দিয়ে দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি আমি কোনো মামলা করব না।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতির পোস্টটি এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে বলা হয়েছে, ‘অবশেষে এনসিপি’র শাপলা প্রতীক পেতে আর কোন আইনি এবং রাজনৈতিক কোন বাধা-ই অবশিষ্ট রইল না। নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে প্রথমে যখন আইনি বাধা দেখাল, তখন এনসিপি’র লিগ্যাল উইং হাতে-কলমে ধরে ধরে বুঝিয়েছে যে এনসিপি’র শাপলা প্রতীক পেতে কোন আইনি বাধা নেই। তখন নির্বাচন কমিশন হাজির করল রাজনৈতিক বাধা রয়েছে। এনসিপি বললো কী সেটা? তারা জবাবে বললো শাপলা প্রতীক আপনাদের আগে নাগরিক ঐক্য চেয়েছে। তাই শাপলা দিলে তাদেরকেই দিতে হবে। কিন্তু আজ যখন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানিয়ে দিলেন যে, এনসিপিকে শাপলা দিলে তাদের দল থেকে কোন মামলা করা হবে না। তখন নির্বাচন কমিশন যে রাজনৈতিক বাধার কথা বলেছিল সেটিও আর থাকছে না। অর্থাৎ, শাপলা পেতে আইনি এবং রাজনৈতিক কোন প্রতিবন্ধকতাই নেই।
এনসিপি জানায়, আমরা নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট করে বলতে চাই আপনারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন, স্বেচ্ছাচারিতা পরিহার করুন, দলীয় প্রভাব থেকে বের হয়ে জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুন।
এনসিপির ফেসবুক পেজ ছাড়াও দলটির একাধিক নেতা মান্নার পোস্টটি নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর শাপলা প্রতীক প্রথমে নাগরিক ঐক্য চেয়েছিল, তাদের দেওয়া হয়নি। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চেয়েছে, কাউকেই দেওয়া হয়নি, উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, শাপলা প্রতীক কেন দেওয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। গণ প্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী নাগরিক ঐক্যকে নিবন্ধন দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রতীক দেয়া হয় কেটলি। নিবন্ধন পাওয়ার নয় মাসের মাথায় গত ১৭ জুন নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানায় নাগরিক ঐক্য। তারা দলীয় প্রতীক ‘কেটলি’র পরিবর্তে শাপলা বা দোয়েল পাখি বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করে।
ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫২টি (আওয়ামী লীগসহ)। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৬টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা।
সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ মোট ৫৬টি প্রতীক ৫৬টি দলের জন্য নিবন্ধিত রয়েছে। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত দলের বাইরের প্রতীকগুলো নতুন ও সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, এনসিপিসহ দু’টি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও ১৩টি দলের আবেদন পর্যালোচনায় রয়েছে।
নদীবন্দর/জেএস