পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা মো. জুবায়েদ হোসাইনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জুবায়েদের ছাত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় বংশাল থানা পুলিশ।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
নিহতের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা ওই ছাত্রী, তার বাবা-মাসহ পাঁচজনের নামে মামলা দিতে চেয়েছি। কিন্তু বংশাল থানার ওসি বলেন, এতজনের নামে যেন মামলা না দেই। মেয়ের বাবা-মায়ের নাম দিলে মামলা নাকি হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চাই তাদের নাম থাকুক। আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হোক।’
নিহতের পরিবার জানায়, রাত ১টা থেকে সকাল পর্যন্ত থানায় অবস্থান করেও মামলা করতে পারেননি তারা। রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে মামলার খসড়া তৈরি করা হয়, কিন্তু ওসি উপস্থিত না থাকায় দেরি হয়। পরে ওসি এসে আসামির সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন।
জুবায়েদের পরিবার আরও জানায়, পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে নিহত জোবায়েদের ছাত্রী, তার বাবা-মা এবং পরিচিত মাহির রহমান ও মো. নাফিসকে আসামি করার আবেদন করা হলে ওসি রফিকুল ইসলাম তা নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধা প্রকাশ করেন।
তবে বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের নামে মামলা দিতে চায়, দিতে পারবে। তবে বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে।’
রোববার রাতে আরমানিটোলার মাহুতটুলিতে পানির পাম্প গলির নুর বক্স লেনের একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জুবায়েদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জুবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
পুলিশ ও জুবায়েদ হোসেনের সহপাঠীদের তথ্যমতে, জুবায়েদ ওই ভবনের একটি বাসায় এইচএসসির এক ছাত্রীকে পড়াতেন। অন্যান্য দিনের মতো রোববার সন্ধ্যায় সেখানে পড়াতে যান তিনি। পরে ছয় তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গায়ে নিজের নামসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত জার্সি দেখে স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন দেন।
খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হন। ফরেনসিক টিম আসার পর রাত ১১টার দিকে জুবায়েদের মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) পাঠায় পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ছাত্রীকে থানায় নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
খবর পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নুর বক্স লেনের ওই বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলকারীরা বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার মোড়, জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
নদীবন্দর/জেএস