দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ না হলে জাতীয়তাবাদী শক্তি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান মিডনাইট সরকারের মাফিয়া-তন্ত্র দেশে-বিদেশে উন্মোচিত হওয়ার পর তারা ঘরে-বাইরে মুখ দেখাতে না পেরে চক্রান্তে মেতে উঠেছে। আল জাজিরার পর ডয়েচে ভেলে এরপর আবার দ্য ইকোনমিস্ট। রাষ্ট্রের সব গোপন অপকর্ম প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ আজ আর কোনো রাষ্ট্র নয়, প্রজাতন্ত্র নয়, বৈদেশিক শক্তি নির্ভর এক মাফিয়া-তন্ত্র মাত্র। এখন সরকারের অবস্থা ‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ।’ চারিদিকে নানা কথাবার্তা, ফিসফাস শুনতে পাচ্ছে জনগণ। সরকারের অবস্থা ভালো না। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা নাটক, রঙ্গ করছে। আবার নতুন করে গ্রেফতার, মামলা, হামলা, নিপীড়ন, নিষ্ঠুর দমননীতি শুরু করেছে। জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করছে।
তিনি বলেন,গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়ে এই মিডনাইট সরকার গায়ের জোরে দেশের আইন-আদালতকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ আজ ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। প্রধানমন্ত্রীর চরম রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হচ্ছেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় নড়াইলের আদালত সরকারের মনস্কামনা পূরণ করতে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির ভুয়া, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধেও। সরকারের চোখ রাঙানি ও প্রতিশোধ পরায়ণতার ভয়ে দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আজ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, ন্যায়বিচারের ধারণা মানুষ ভুলে যেতে শুরু করেছে। আদালতকে আওয়ামী মাফিয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশীদারে পরিণত করা হয়েছে। একদিকে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ খালেদা জিয়াকে হত্যার চক্রান্ত অন্যদিকে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা ও জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাশাপাশি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির মিথ্যা মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় পরিণতি শুভ হবে না।
এ সময় রিজভী আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিহিংসার পরিণতি হয় অস্বাভাবিক। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে রাজনৈতিক সমাধান হবে না বরং দেশকে নিয়ে যাওয়া হবে চরম নৈরাজ্যের দিকে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব জুলম-নিপীড়ন-নির্যাতনের অবসান না হলে জাতীয়তাবাদী শক্তি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।