বদলে যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়িক চিত্র। অচিরেই এ বন্দর দিয়ে নিষিদ্ধ ব্যতীত সব ধরনের পণ্য আমদানি করা যাবে। আগে মাত্র সাতটি পণ্যের আমদানির অনুমতি ছিল, যেগুলো একেবারে আসতো না বললেই চলে। যে কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি একেবারে শূণ্যের কোঠায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের চেষ্টায় মূলত পণ্য আমদানিতে পূর্ণাঙ্গতা পেল আখাউড়া স্থলবন্দর। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আনিসুল হক তাঁর ঘনিষ্টজন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. তাকজিল খলিফার কাছে বিষয়টি জানান। পরে তাকজিল খলিফা বিষয়টি প্রকাশ করার পর পরই ব্যবসায়ীদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। বিতরণ করা হয় মিষ্টি।
বন্দরের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকারের নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম ব্যাপক গতি পাবে। নানা কারণে বাড়বে যাত্রী সংখ্যাও। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে। বন্দরটি দিয়ে ভারতীয় শাড়িসহ মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক, কসমেটিকস আমদানি বেশি হবে বলে ব্যবসায়ীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আখাউড়া পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বন্দরের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শনি ও রবিবার বন্ধ থাকবে। আখাউড়া স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা ও আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম এ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, বিষয়টি ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে এটিকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকেই গতি বাড়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের। এ বন্দর দিয়ে যাওয়া পণ্য ভারতের সেভেন সিস্টার হিসেবে সাতটি রাজ্যের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতো। এর মধ্যে পাথর, রড, সিমেন্ট, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য ছিলো উল্লেখযোগ্য।
এক পর্যায়ে বন্দরটি দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাছ রপ্তানি শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত। তবে অন্যান্য পণ্য এখন খুব বেশি একটা যাচ্ছে না। ভারতের ওই রাজ্যগুলোতে আভ্যন্তরীন যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়া, সেখানে বিভিন্ন কারখানা স্থাপন হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি একেবারেই কমে আসে। তবে আগের তুলনায় যাত্রী পারাপার কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যোগাযোগ সহজ হওয়ায় বিশেষ করে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যেতে বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকার মানুষ এ বন্দরটি ব্যবহার করে।
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, বিভিন্ন কারণে বন্দরটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম তুলনামূলক অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। এখন সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মাছ রপ্তানি হয়। যে কারণে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই সব পণ্য আমদানি অনুমতির জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকাবার কথাও বলা হয়। মূলত মন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ক কোনো প্রজ্ঞাপন পাইনি। মূলত আইনমন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমেই বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। মন্ত্রীর নির্দেশে মেয়র আমাদেরকে বিষয়টি অবগত করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভৌগলিক কারণে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পণ্য আমদানিতে অনেকেই আগ্রহ দেখাবেন। যে কারণে ব্যবসায়িক গতি বেড়ে বন্দর দিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়িরাও তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
নদী বন্দর / জিকে