নির্ধারিত সময়ের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এখনও শুরুই হয়নি প্রায় ৬০টি প্রকল্পের কাজ। যদিও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়মমতো সমস্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
যদিও ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজের জন্য গঠিত ১৬১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) ১০১টির কাজ শুরু হয়েছে। নতুন আরও কয়েকটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় ওই অঞ্চলের চাষিরা আগাম বন্যার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা বলছেন, বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারলে অকাল বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা আছে।
জেলা পাউবো সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দা, বারহাট্টা উপজেলায় আংশিক হাওরাঞ্চল রয়েছে। এসব হাওরের সারা বছরের একমাত্র ফসল বোরো। এ ফসলেই কৃষকদের সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়ালেখা ও আচার অনুষ্ঠান চলে।
জেলায় ছোটবড় মোট ১৩৪টি হাওর আছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে আছে ৮৯টি হাওর। হাওরাঞ্চলে ৩১০ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ। বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের ৫০ হাজার হেক্টরের বেশি জমির বোরো ফসলের আবাদ নির্ভর করে।
এবার জেলায় ১৬১টি পিআইসির গঠন করা হয়। এর মধ্যে কলমাকান্দায় ৯টি, বারহাট্টায় ৩টি, আটপাড়ায় ১টি, মদনে ২৪টি, মোহনগঞ্জে ১৮টি ও খালিয়াজুরীতে ১০৬টি পিআইসি আছে। ওই পিআইসিগুলোর আওতায় ১৪৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধে মাটি কাটার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও বারহাট্টায় ১টি, মদনে ১২টি, মোহনগঞ্জে ৫টি, খালিয়াজুরীতে ৪৪টিসহ মোট ৬২টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি।
পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী, কাজের মেয়াদ আর মাত্র ৭ দিন বাকি। অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে জরিপকাজ, প্রাক্কলন ও পিআইসি গঠন করতে হবে। আর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে তা ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু এখনও ৬০টি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। বাঁধগুলো মেরামতের জন্য এ বছর পাউবো প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়।
খালিয়াজুরী সদরের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, গত ২০ বছরে ৮ বার বন্যা হয়েছে। সাধারণত পরপর কিংবা চার বছর পরপর হাওরে বন্যা হয়। সেই হিসাবে সবশেষ ২০১৭ সালের বন্যায় শতভাগ ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই এবারও বন্যার আশংকা রয়েছে।
জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেই এখনও সব পিআইসির কাজ শুরু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ, পানি নামতে দেরি, আগাম বন্যা এসব অযুহাত কাজে আসবে না।
এ বিষয়ে জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, এবার হাওরে পানি দেরিতে নামায় জরিপকাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। এরমধ্যে ১০১টি প্রকল্পের কাজ চলছে। দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা পেলে বাকি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। চলমান প্রকল্প শেষ করতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করলে সময় বাড়ানো হবে। আশা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রথম ধাপের ৬২টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপের আরও ১৪টি প্রকল্পের কাজ দু’দিন আগে শুরু হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের জন্য আরও ৩৪টি প্রকল্পের পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে বাকি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
ফসল রক্ষা বাঁধ সর্ম্পকে জানতে চাইলে জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, আমি নিজেও কয়েকবার বাঁধগুলো পরিদর্শন করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন প্রতিটি ইউনিয়নের কাজের মান নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সবগুলো বাঁধের কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে প্রয়োজনে সময় বাড়ানো হবে।