1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
এবার আসবে যমুনার পানি বুড়িগঙ্গায়! - Nadibandar.com
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ২০৭ বার পঠিত

অর্থভাবে তীরে এসে যদি তরি ডুবে-তাহলে আগামী বছর আরও একদফা বাড়বে ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম)’ প্রকল্প ব্যয়। এই প্রকল্পের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছর এপ্রিলের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই প্রকল্পের কাজ আরও একদফা ঝুলে যাবে। এক্ষেত্রে অর্থ প্রাপ্তির ওপর প্রকল্পটির শেষ মূহুর্তের কাজ নির্ভর করছে।

প্রায় এক যুগ ধরে চলছে এই প্রকল্পের কাজ। অর্থ সঙ্কটের কবলে পওে বারবার বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে এই প্রকল্পটি। অনেকের কাছেই এই প্রকল্পটি ‘উচ্চাভিলাসী’; আবার কারো মতে ‘বাস্তবমুখী’। তবে এর কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হোক এটি সকলেরই প্রত্যাশা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১৬৫ কিলোমিটার পারি দিয়ে যমুনা নদীর পানি আসবে বুড়িগঙ্গায়। বাড়তি ফসল উৎপাদনসহ বহুমুখি সুবিধা সম্বলিত এই প্রকল্পটির সম্পূর্ন বাস্তবায়ন নির্ভর করছে অর্থনৈতিক যোগানের ওপর। অতিতেও অর্থের অভাবে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। যার ফলে ২০০৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। এক যুগ আগে এই প্রকল্পটির যেখানে ব্যয় ছিল ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের তাগিদ থাকলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থের টানাপোড়েন এখনও রয়ে গেছে। দশ বছরে ভূমি অধিগ্রহণ, ভৌত কাজ, ড্রেজিং বাবদ এই প্রকল্পের পেছনে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হলে দ্রুততার সাথে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে সেখানে কর্মরত একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠাণ জানায়। ওই প্রতিষ্ঠাণের এক কর্মকর্তার মতে, তারা বিল না পাওয়ায় ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না।

জানা গেছে, এই অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্ত বরাদ্দ এখনও মেলেনি। এছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পর এর রক্ষনাবেক্ষনের জন্যও প্রয়োজন হবে বছরে ৭২ কোটি টাকা। অন্যথায় এর সুফল পাওয়া যাবে না।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এর সাথে আরও কয়েকটি মন্ত্রনালয় সংশ্লিষ্ট। আমরা বুড়িগঙ্গাকে সচল করতেই যমুনার পানি কয়েকটি নদীন মাধ্যমে বুড়িগঙ্গায় আনার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা প্রকল্প কাজ শেষ করতে পারবো।

প্রকল্পের ব্যপারে সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, প্রকল্পটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। অর্থ সঙ্কটের কবলে পড়ে আবারও প্রকল্পের কাজ বাঁধাগ্রস্থ হবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থের কোন সমস্যা হবেনা। কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ অবশ্যই বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, চলতি বছর জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হলে দ্রুততার সাথে এই প্রকল্পের ১শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন। মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে এপ্রিল থেকে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করবে। তখন কাজ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে কয়েক কিলোমিটার উজানে আলীপুর ও বেলটিয়ার মাঝে নিউ ধলেশ্বরীর অফটেক মুখ। এই মুখ কেটেই যমুনার পানি আনা হবে বুড়িগঙ্গায়। প্রকল্পের কাজে যথেষ্ট গতি রয়েছে। তিনটি স্থানে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। যমুনা থেকে নিউ ধলেশ্বরীর যে মুখটি কেটে পানি নেওয়া হবে সেখানে কাজ করছে নারায়নগঞ্জ ড্রেজার। অফটেক মুখ থেকে এরা ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত কেটে সেডিমেন্ট বেসিন পর্যন্ত যাবে। এই বেসিনে যমুনা নদী থেকে আসা পানি বালিমুক্ত করবে। এই সেডিমেন্ট বেসিন, ইনটেক চ্যানেল ও সেডিমেন্ট বেসিনের বাইরে বছরে গড়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ ঘনমিটার পলি জমা হবে। জমা হওয়া বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ ও তা বিক্রিও করা যাবে। ৪০০ মিটার চওড়ায় ৩ লাখ ১৪ হাজার স্কয়ার মিটারের বেসিনটির নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুততার সাথে। এরপর থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার খনন কাজ করছে এডিএল ও ডব্লিউইএল যৌথভাবে। ৬৭ থেকে ৮৭ দশমিক ৫ এর মাঝে সাড়ে ২০ কিলোমিটার খননের কাজ করছে বঙ্গ ড্রেজার লিমিটেড।

উল্লেখ্য, ঢাকার নগরবাসীকে দূষণমুক্ত বুড়িগঙ্গা উপহার দেওয়ার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পানির রং কালচে আকার ধারণ করে ছড়াচ্ছে পচা দুর্গন্ধ। অনেকের মতে, বুড়িগঙ্গার পাড় দিয়ে চলাচল করাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, শীতকালে এর পানি থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগজীবাণু। দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় ক্রমেই এর রং কালো হয়ে পড়ছে। যদিও কখনো ড্রেজিং, কখনো হাজারীবাগের ট্যানারি স্থানান্তর করার মাধ্যমে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্ত এতে কাঙ্খিত সুফল আসেনি। যার ফলে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি নতুনভাবে গৃহিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে-অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, তুরাগ ও পুংলি নদী। কৃষিখাতে পড়বে এর ইতিবাচক প্রভাব।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৬৯ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে। মৎস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত ও নাব্যতা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য যমুনা থেকে ২৪৫ কিউমিক পানি আসবে বুড়িগঙ্গায়।

যমুনা থেকে বুড়িগঙ্গার দূরত্ব মোট ১৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিউ ধলেশ্বরী ২ দশমিক ২, পুংলী ৬১ দশমিক ৫০, বংশাই ২০ দশমিক ৫০ ও তুরাগ নদীর দৈর্ঘ্য ৭৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এসব নদীর অফটেকের উৎসমুখের স্থানটি ভাটিমুখী যমুনার প্রবাহের সঙ্গে সমন্বয় করে সামান্য পরিবর্তন করা অথবা অবস্থানের স্থানান্তর করে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি, চক্রাকার নৌপথ ও বুড়িগঙ্গার পানি সহনীয় মাত্রায় দূষণমুক্ত করা যেতে পারে।

নদী বন্দর / এসএইচবি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com