মাদারীপুরের শিবচরে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মা সেতুর ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের নিচ দিয়ে বয়ে চলা প্রায় ২ কিলোমিটার হাজরা নৌ-চ্যানেলটি সম্পূর্ণই ভরাট হয়ে গেছে বালুচরে। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের এক সময়ের ব্যস্ততম এই চ্যানেলটি এখন শুধুই বালুচরের দখলে। যেই চ্যানেলটি রাত-দিন ব্যস্ত ছিল নৌযান চলাচলে আজ সেই চরের মাটিতে ধান চাষ করছেন কৃষক।
নৌ-চ্যানেলটি সচল রাখতে পাশেই বিকল্প চ্যানেল খনন করা হয়েছে। বিকল্প চ্যানেল দিয়ে এখন চলছে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটসহ নৌযানগুলো।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের ব্যস্ততম দেশের অন্যতম নৌরুট বাংলাবাজার-শিমুলিয়া। আর এই রুটের একসময়ে ব্যস্ততম চ্যানেলটি ছিল লৌহজং-হাজরা চ্যানেলটি। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে নৌপথে শিবচর থেকে মূল পদ্মায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এই হাজরা-লৌহজং চ্যানেলটি।
কিন্তু বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে হঠাৎ ভরাট হতে থাকে চ্যানেলটি। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই চ্যানেলটি সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। চ্যানেলে জেগে ওঠা চরের মাটিতে এখন ধান চাষ করছেন কৃষক। আর নৌযান চলছে পাশ দিয়ে তৈরি বিকল্প চ্যানেল বাংলাবাজার-শিমুলিয়া দিয়ে।
এদিকে পদ্মা সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা পদ্মার পাড়ে আসেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্বপ্নের সেতু দেখতে আসা দর্শনার্থীদের আনাগোনায় জমে উঠেছে কাঁঠালবাড়ী ঘাট। বসেছে বিভিন্ন দোকানপাটের পসরা।
যশোরের অভয়নগর থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা নুরুল ইসলাম জানান, পদ্মায় ঢেউ নেই, নেই স্রোত। এখন পদ্মা সেতুর অবয়ব ছাড়া আর কিছুই নেই। নদীর যে সৌন্দর্য ছিল, তা হারিয়ে গেছে। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে হাজরা-লৌহজং চ্যানেল দিয়ে আগে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল করত তাও ভরাট হয়ে গেছে।
বরিশাল থেকে আসা দর্শানার্থী সুমাইয়া আক্তার জানান, পদ্মা সেতু দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অগনিত মানুষ এখানে আসছে। কিন্ত ঘাটে দর্শনার্থীদের জন্য তেমন সুবিধা নেই। তবে কিছু ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা রাখা আছে। দর্শনার্থীরা পদ্মা সেতুসহ নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারছে না।
খুলনা থেকে আসা ফেরি যাত্রী আসমা আক্তার জানান, পদ্মা নদীর বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের এক সময়ের এই ব্যস্ততম চ্যানেলটি এখন অকেজো। দিন দিন নদীর গতি পরিবর্তন হচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে নৌপথ। এ পর্যন্ত প্রায় তিনটি নৌরুট ব্যবহার করে নৌযান চলাচল করতে হয়েছে।
বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ম্যানেজার সালাউদ্দিন মিয়া জানান, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পূর্বের হাজরা-লৌহজং চ্যানেলটি সর্ম্পূণ চর জেগে গেছে। বেশ কয়েক মাস আগেও এই চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল করতো। এখন তা চরে রূপান্তরিত হয়েছে। বিকল্প হিসেবে কর্তৃপক্ষ পাশেই একটি চ্যানেল খনন করে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রেখেছে।
বিআইডব্লিউটিসির খনন বিভাগের প্রকৌশলী মেরিন আহম্মদ আলী জানান, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে নৌযান চলাচলে এ পর্যন্ত ৩টি রুট ব্যবহার করা হয়েছে। হাজরা-লৌহজং চ্যানেলটিতে যখন নৌযান চলাচল করত তখন পদ্মা সেতুর ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের নিচ দিয়ে চলাচল করতে হত। এই চ্যানেলে মাঝে মধ্যে নাব্য সংকট দেখা দিলে জাজিরা হয়ে পদ্মা সেতুর ৩৮, ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করা হতো। বর্তমানে আগের চ্যানেলের পাশের চর কেটে বিআইডব্লিউটিএর তৈরি করা চ্যানেল দিয়ে ফেরিসহ নৌযান চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএ নৌপথে চ্যানেল খনন করে দিলে বিআইডব্লিউটিসি সেই চ্যানেলে নৌযান চলাচল অব্যাহত রাখে।
এ বছর পদ্মা নদীর স্রোত মাত্রারিক্ত পলি আসার কারণে ওই চ্যানেলটি কোনোভাবেই কেটে অব্যাহত রাখা যায়নি। পদ্মায় যে হারে বর্ষা মৌসুমে পলি পড়ে তাতে কোনোভাবে আগের হাজরা চ্যানেলটি সচল রাখা সম্ভব হয়নি। তাই বিকল্প চ্যানেল তৈরি করে নৌযান চলাচল অব্যাহত রাখা হয়। তবে মাঝ নদীতে তেমন কোনো নাব্য সংকট নেই। শুধুমাত্র বাংলাবাজার ঘাটের কাছে কিছুটা নাব্য সংকট থাকলেও তা বিআইডব্লিউটিএ খনন করে চালু রাখছে।
বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান জানান, এ বছর দীর্ঘ সময় ধরে বর্ষা মৌসুম অব্যাহত থাকে। উজান থেকে আসা পানির সাথে প্রচুর পরিমাণে পলি এসে হাজরা-লৌহজং চ্যানেল ভরাট হয়ে যায়। তাই পদ্মা সেতুর পাশে প্রায় ১ হাজার মিটার জেগে ওঠা বড় চর কেটে নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। ওই চ্যানেল দিয়ে ফেরি, লঞ্চসহ নৌযান চলাচল করছে। মানুষের ভোগান্তিও কমেছে।
নদী বন্দর / জিকে