1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
মরছে নদী কমছে মাঝি - Nadibandar.com
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ১৬৯ বার পঠিত

নদী-নালাবেষ্টিত বাংলাদেশে এক সময়ে যোগাযোগের অন্যতম বাহন ছিল নৌকা। সেই নৌকা চালিয়ে যারা জীবনধারণ করেন অঞ্চলভেদে তারা মাঝি, মাল্লা, নাওয়া, নৌকাজীবী, নৌকাচালক, কান্ডারি, পাটনি, কর্ণক ইত্যাদি নামে পরিচিত।

শরীয়তপুর জেলা নদীবেষ্টিত। এ জেলার নদীর মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা, জয়ন্তী, দামুদিয়া, আড়িয়াল খাঁ, বিনোদপুর, পালং নদী, নড়িয়া খাল ও বাংলাবাজার খাল উল্লেখযোগ্য। এলাকায় উৎপাদিত নানান ফল, ফসল ও পণ্য দুই দশক আগে এসব নদী ও খাল দিয়ে আনা-নেয়া করতেন সব শ্রেণির মানুষ। কিন্তু কালের বিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে বেড়েছে সেতু। ফলে খেয়া ঘাটের মাঝি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এছাড়া গ্রীষ্মকালে বেশিরভাগ নদী ও খালে চর জাগায় নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে।

জেলা নদী পরিব্রাজক দলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, দুই দশক আগে শরীয়তপুর জেলা বা উপজেলায় অন্তত সাড়ে তিন হাজার খেয়া ঘাটের মাঝি পরিবার এ পেশায় জড়িত ছিল। আস্তে আস্তে এ পেশা বিলুপ্ত হতে থাকে। এখন সে সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে দুইশতে।

তিনি বলেন, দখলদারদের হাতে নদী ও খাল দখল, নদীর আকার কমে নব্য সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে খেয়া ঘাটের মাঝিরা এখন বিলুপ্তপ্রায়।

নড়িয়া উপজেলার জপসা লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত জগেশ্বর মাঝির একমাত্র ছেলে রমেশ মাঝি। কথা হয় তার সঙ্গে।

jagonews24

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কীর্তিনাশা নদীর খেয়া ঘাটে তার দাদা ধনেঞ্জয় মাঝির কাজ শুরু করেন। পরে তার বাবা জগেশ্বর মাঝির কাজ শুরু করেন। রমেশ মাঝির বয়স যখন আড়াই বছর তখন মা মারা যান। কয়েক বছর পর তার বাবাও মারা যান। তারা চার বোন, এক ভাই। বোনদের মানুষ করতে ও বিয়ে দিতে ১৫ বছর বয়সে মাঝির কাজ শুরু করেন রমেশ।

রমেশ জানান, তিনি যখন মাঝি হিসেবে কাজ শুরু করেন তখন একজন মানুষ পার করলে ২ পয়সা করে পেতেন। কয়েক বছর পর ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, পরে ৫০ পয়সা, এক টাকা, দুই টাকা এবং এখন পাঁচ টাকা করে নদী পারাপার করেন। প্রতিদিন ৫০০-৭০০ মানুষ পার করেন। কিন্তু পারাপারে পরিচিতরা টাকা দেন না। তারা বছরে যা ফসল পায় তার একটি অংশ দিয়ে সহযোগিতা করেন রমেশকে।

রমেশ মাঝি বলেন, নৌকা চালানো আমার পেশা। এতদিন অতি যত্নে ধরে রেখেছি। নৌকা চালাতে চালাতে কখন যে জীবনের ৪৭টি বছর কেটে গেছে তা বুঝতেই পারিনি।

দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার মাঝি সিরাজ উদ্দিন নক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, কীর্তিনাশা নদীটি কাটার পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা চালায়। শুরু হয় যুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজগঞ্জ-আড়িগাঁও কীর্তিনাশা নদীর খেয়া ঘাটে মাঝি হিসেবে কাজ শুরু করি। এখন কীর্তিনাশা নদীর ওপর রাজগঞ্জ-আড়িগাঁও সেতু হওয়ায় মাঝির পেশা ছেড়েছি। তবে পেশা ছাড়লেও দুই পাড়ের মানুষ এখনও আপন হয়ে রয়েছে।

মাঝি নুরু মিয়া সরদার জানান, চরস্বর্ণঘোষ-দক্ষিণ গোয়ালদি কীর্তিনাশা নদীর খেয়া ঘাটের মাঝি ছিলাম। উপার্জন কম থাকায় পেশা পরিবর্তন করেছি। আট বছর আগে এ পেশা ছেড়ে শ্রমজীবীর কাজ বেছে নিয়েছি।

গোসাইরহাট উপজেলার দীপুর গ্রামের কালু ব্যাপারী জয়ন্তী নদীর খেয়াঘাটে মাঝির কাজ করতেন। কালু ব্যাপারীর মৃত্যুর পর তার পথ অনুসরণ করে মাঝি হন মিলন নেছা।

তিনি জানান, স্বামী রহম আলী সরদার ১৫ বছর আগে তাকে ও দুই ছেলেকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। বড় ছেলে আব্দুল খালেক (২৬) বিয়ে করে আলাদা থাকে। আর নদীর পাড়ে ছাউনি নৌকায় ছোট ছেলে আব্দুল মালেককে (২২) নিয়ে থাকেন তিনি। নৌকাতেই রান্না-খাওয়া, নৌকাতেই তার বসবাস।

jagonews24

বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিশু সংগঠক ও কবি মফিজুল ইসলাম (কবি ভাই) বলেন, আগে মালামাল পরিবহন নদী পারাপারের কাজটি নৌকার মাধ্যমে হতো। দেশে সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট তথা উন্নয়ন হওয়ায় এবং বিভিন্ন কারণে নদী-খাল ভরাট হওয়ায় নদী পারাপার যারা করতেন, তারা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

সমাজসেবক শেখ খলিলুর রহমান বলেন, গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগা এবং আয় কম হওয়ায় পেশা ছেড়ে দিয়েছেন মাঝিরা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, পানি আসার জন্য নদী ও খালে যেই শাখা প্রশাখা ছিল সেগুলো প্রায় বিলুপ্তির পর্যায়ে। হতে পারে এ কারণেই নৌকার মাঝি কমছে। এছাড়া স্থানীয় দখলদারদের জন্য নদী ও খালের শাখা প্রশাখা বন্ধ হচ্ছে।

নদী বন্দর / জিকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com