‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, বীমা হোক সবার’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ দেশে পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় বীমা দিবস’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বীমা খাতের শুরু হলেও ২০২০ সালের পয়লা মার্চ প্রথমবারের মত জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হচ্ছে।
জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আজ ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু বীমা মেলা আয়োজন করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। দিবসটি উপলক্ষে আইডিআরএ নিজস্ব অর্থায়নে চালু করছে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’। এর বার্ষিক প্রিমিয়াম ৮৫ টাকা।
তিন থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জন্য আভিভাবকরা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা করতে পারবেন। এজন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হবে ৮৫ টাকা। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা পলিসি গ্রহণের পর কোনো কারণে অভিভাবক মারা গেলে ওই শিশু ১৭ বছর পর্যন্ত মাসিক ৫০০ টাকা করে পাবেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আজ আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধু বীমা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে স্বল্প প্রিমিয়ামে অর্থাৎ মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য দুই লাখ টাকার চিকিৎসা সুবিধাসহ চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’। এছাড়া ১৬ লাখের বেশি প্রতিবন্ধীর জন্য স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্প তৈরির কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্পোটর্সম্যান ইন্স্যুরেন্স’।
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করেছিলেন। ফলে দিনটিকে প্রতিবছর বীমা দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় এ খাতের উদ্যোক্তারা। সরকারও এর অনুমোদন দিয়েছে। এ উপলক্ষ্যে প্রতিবছর মেলার আয়োজন করা হলেও করোনার কারণে এবার অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়েছে।
বীমা হল নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কোন প্রতিষ্ঠানকে স্থানান্তর করা। দেশের পৌনে দুই কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের বীমার আওতায় রয়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশে বীমা সম্পর্কে এখনো অনেকেই ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন না।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাধারণ জনগণই বীমাশিল্পের প্রাণ। তাই গ্রাহকের চাহিদা ও সন্তুষ্টিকে বিবেচনায় রেখে এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে বীমার গুরুত্ব এবং এর অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে স্বাধীনতার পর বীমা শিল্পকে অধিকতর অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলি নামক ৪টি বীমা কর্পোরেশন গঠন করেছিলেন। একই সঙ্গে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে জাতীয় বীমা কর্পোরেশন গঠন করেন।
পরবর্তীতে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে ‘ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন আইন-১৯৭৩’ প্রণয়ন করে এই ৪টি কর্পোরেশনকে ভেঙ্গে ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’ এবং ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ নামে দু’টি পৃথক বীমা কর্পোরেশন গঠন করেন। এ দু’টি কর্পোরেশন এখনও দেশে বীমা ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে দেশের জনগণকে বীমা সেবা দিয়ে আসছে। বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বীমা অধিদপ্তর গঠন করেন।’
নদী বন্দর / জিকে