এলাকাবাসীর উদ্যোগ, চাঁদার অর্থায়ন আর স্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের মতানুসারে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ‘বিলসড়াইল বটতলা‘ নামক স্থানে চন্দনা-বারাশিয়া কুমার নদীতে দ্রুতগতিতে চলছে একশ ফুট লম্বা সেতু নির্মাণের কাজ। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ধর্ণা দিয়ে কারো কোনো সাড়া না পেয়ে শেষমেশ এলাকাবাসী নিজেরাই চাঁদা তুলে হাতে নিয়েছেন এ সেতু নির্মাণের কাজ।
এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয় ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক দলের ছোট-বড় নেতা, এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কাছেও তারা এ সেতু নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে কাকুতি-মিনতি জানিয়েছেন বহুবার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। জোটেনি কোনো ফল। তাই অনেকটা ক্ষোভ আর জেদ থেকে সাত গ্রামের মানুষ নিজেরা উদ্যোগ নেয় সেতু নির্মাণের।
এদিকে নদীর ওপর বেসরকারি উদ্যোগে সেতু নির্মাণ করা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সেতু নির্মাণের প্রকৌশলগত কোনো জ্ঞান না থাকা, নিয়ম-কানুন অনুসরণ না করায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে থেমে নেই নির্মাণ কাজ।
অপরদিকে সেতুটি নির্মাণে প্রযুক্তিগত বিষয় দেখভালের জন্য নেই কোনো প্রকৌশলী বা প্রকৌশল তত্ত্বাবধায়ক। শুধুমাত্র নির্মাণ-শ্রমিকদের অভিজ্ঞাতই পুঁজি।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর এমন সাহসী উদ্যোগ একদিকে যেমন প্রশংসিত হচ্ছে অন্যদিকে সেতুটি ব্যবহারে ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে।
গত ৩ মার্চ বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রাসেল রেজা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম ব্রিজের কাজ পরিদর্শন শেষে এলাকাবাসীকে সাধুবাদ জানান। এ সময় দোয়া-মোনাজাত করা হয়।
জানা গেছে, ওই এলাকার সাত গ্রামের প্রায় হাজার দশেক মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্ভোগের স্বীকার হয়ে আসছে একটি সেতুর অভাবে। অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি থেকে একশ ফুট দীর্ঘ এবং সাড়ে তিন ফুট প্রস্থের এ সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজে নিয়োজিত স্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের প্রতি বর্গফুট বাবদ দিতে হবে ৩৫০ টাকা। প্রতিদিন ১৪ জন রাজমিস্ত্রি কাজ করছে। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
মাস দুই আগে এলাকাবাসী সভা করে সেতুটি গড়ার উদ্যোগ নেয়। এতে উদ্যোক্তা প্রধান করা হয় বিলসড়াইল গ্রামের শেখ হারুন-অর রশিদকে।
সরকারি টাকা না পাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষোভ-অভিমানে যাননি বলে জানিয়ে সেতু নির্মাণের প্রধান উদ্যোক্তা শেখ হারুন-অর রশিদ বলেন, পাঁচ জোড়া পিলারের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সেতু দিয়ে তো ভারি যানবাহন চলবে না। রাজমিস্ত্রিদের মতামতে বেজমেন্ট ও পিলারে ১৬ মিলি মাপের প্রয়োজনীয় সংখ্যক রড দেয়া হয়েছে।
এভাবে সেতু নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রফিকুল ইসলাম বলেন, যেকোনো নদীর ওপর এভাবে সেতু নির্মাণ ঠিক নয়। এটা ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি।
ইউনিয়ন পরিষদে সেতু নির্মাণের জন্য কোনো বাজেট নেই। তাই ইউনিয়ন পরিষদের কিছু করার নেই বলে ব্যর্থতা প্রকাশ করেন ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মো.সেলিম ।
নদী বন্দর / পিকে