তৃতীয় ধাপের খননে অনেকটা প্রাণ ফিরেছে দেশের উপকূল ভাগে মিঠা পানির অন্যতম উৎস গড়াই নদীতে। কুষ্টিয়া অংশে খনন প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনায় এবার শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ অনেক বেড়েছে। এতে সুন্দরবন এলাকায় বেড়েছে মিঠা পানির সরবরাহ, কমেছে লবণাক্ততা।
সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলভাগে মিঠা পানির অন্যতম আধার পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই। এর উৎপত্তি কুষ্টিয়ায়। শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় পানি কমে গেলে বন্ধ হয়ে যেতো গড়াইয়ের উৎসমুখ। এতে সুন্দরবনসহ উপকূলভাগে মারাত্মক লবণাক্ততা দেখা দেয়।
বিপুল অর্থ ব্যয়ে দুই দফায় এ নদী খনন করা হলেও আসেনি কাঙ্ক্ষিত ফল। ২০১৮ সালে খনন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে আবারও গড়াই খনন শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে শুষ্ক মৌসুমে গড়াইয়ে বেড়েছে পানি প্রবাহ।
নদী পাড়ের মানুষরা জানান, এবার কাটার পর সব নদীতে পানি দেখা যাচ্ছে। নদীতে গোসল করতে আসা হয়, এই পানি রান্নার জন্য কেউ কেউ নিয়ে যায়।
পানিপ্রবাহ বাড়ায় খুশি নদী পাড়ের মানুষ। মাছও ধরছেন জেলেরা।
এলাকাবাসী ও মৎস্যজীবীরা জানান, কৃষিকাজ ও গাছগাছালি আগের থেকে এখন বেশি সতেজ। গতবছরের তুলনায় এবার নদীতে বেশি পানি এবং মাছের সংখ্যাও বেশি দেখা যাচ্ছে।
শুষ্ক মৌসুমে গড়াইয়ে পানিপ্রবাহ ভাল থাকায় সুন্দরবন এলাকায় মিঠা পানির সরবরাহ বেড়েছে। আর লবণাক্ততা নেমে এসেছে অর্ধেকে।
গড়াই খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯’র তুলনায় বেডউইট তিনগুণ এবং অপটিকের বেডউইট প্রায় ৫-৬ গুণ বাড়িয়েছি আমরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শুধু খননই নয়, বালি ও মাটি কাজে লাগিয়ে নদীপাড়ের জমি ভরাট করে বনায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল হক বলেন, খাস জমি এবং নদী সিকস্তির জমি রি-ক্লেইম করা হচ্ছে। সেই রি-ক্লেইম জমিতে আবার প্রতিরক্ষা কাজ করে এটাকে স্থায়ীত্ব দেয়া হচ্ছে। সেখানে ফরেস্টেশন করা হচ্ছে।
সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কুষ্টিয়ার পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. রেজওয়ানুল হক বলেন, সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ বজায় রাখার জন্য গড়াই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখা জরুরি।
২০২২ সালে শেষ হবে এ প্রকল্পের কাজ।
নদী বন্দর / পিকে