নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে চলতি শতাব্দীর শুরুর সময়টা বিশ্ব ক্রিকেটে চলতো একটি তর্ক, কে সেরা? ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকার নাকি ত্রিনিদাদের রাজপুত্র ব্রায়ান লারা? তাদের ক্রিকেটীয় সামর্থ্য এতটাই ছিল যে, তর্কাতীতভাবে কাউকে সেরা বলার সুযোগ ছিল না কোনোদিনও।
এবার ভারতে আয়োজিত রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে ফিরে এলো ঠিক যেন শচিন-লারার সেরা সময়ের লড়াই। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে লারার নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ লেজেন্ডস মুখোমুখি হয়েছিল শচিনের অধীনে খেলা ভারতীয় লেজেন্ডস। যেখানে শেষ হাসিটা হেসেছেন শচিন। তবে বয়স পঞ্চাশ পেরুনোর পরেও ব্যাট হাতে ঝঙ্কার তুলেছেন লারাও।
রায়পুরের শহীদ বীর সিং স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে শচিনের ফিফটিতে ২১৮ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত লেজেন্ডস। জবাবে ডোয়াইন স্মিথ ও নারসিং ডেনোরাইনের ফিফটির সঙ্গে লারার লড়াকু ৪৬ রানের ইনিংসের পরেও ২০৬ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ লেজেন্ডস। ফলে ১২ রানের জয়ে ফাইনালে উঠে গেছে ভারত।
২১৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইলিয়াম পারকিনসের উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেন স্মিথ ও ডেনোরাইন। দুজন মিলে মাত্র ৫৮ বলে গড়েন ৯৯ রানের জুটি। তখন মনে হচ্ছিল, সহজেই জিততে চলেছে ক্যারিবীয়রা।
ইনিংসের ১১তম ওভারে পাঠান ভাইদের যুগলবন্দীতে ভাঙে জুটি। ইরফান পাঠানের বলে ইউসুফ পাঠানের হাতে ক্যাচ দিয়ে স্মিথ ফেরেন ৩৬ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে। ঝড় তোলা ব্যাটিংয়ে ৯ চারের সঙ্গে জোড়া ছক্কা হাঁকান তিনি। ক্যারিবীয়দের জয়ের জন্য তখন বাকি ছিল ৫৫ বলে ১০০ রান।
এরপর ব্যর্থ হন কার্ক এডওয়ার্স। তিনি রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরলে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে আসেন রেকর্ডের বরপুত্র ব্রায়ান লারা। ডেনোরাইন ও লারা মিলে দলকে জয়ের পথেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৮০, মাত্র ৪৩ বলে। নিজের সেরা সময়ের সব শট খেলে ফিফটির কাছাকাছি পৌঁছে যান লারা।
শেষ দুই ওভারে ক্যারিবীয়দের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৫ রান। তখনই নিজের সেরা ওভারটি করেন বিনয় কুমার। সেই ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন ৪ চার ও ২ ছয়ের মারে ২৮ বলে ৪৬ রান করা লারা। শেষ বলে টিনো বেস্টকেও ফেরান বিনয়। যে কারণে ১৯তম ওভার থেকে আসে মাত্র ৮ রান।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে বাকি থাকা ১৭ রান আর করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উল্টো ইরফান পাঠানের তোপে মাত্র ৪ রান আসে সেই ওভারে। তৃতীয় বলে রানআউট হন ৪৪ বলে ৫৯ রান করা ডেনোরাইন। ইনিংসের শেষ বলটি ডট করে দলকে ১২ রানের জয় এনে দেন ইরফান পাঠান।
এর আগে ভারতকে চূড়ায় তোলার মূল কৃতিত্ব শচিনের। তবে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন যুবরাজ সিং, ইউসুফ পাঠান, ভিরেন্দর শেবাগরা। উদ্বোধনী জুটিতে শেবাগ-শচিন মিলে ৩৩ বলে যোগ করেন ৫৬ রান। শুরু থেকেই ঝড় তুলে ৫ চার ও ১ ছয়ের মারে মাত্র ১৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে আউট হন শেবাগ।
তিন নম্বরে নামা কাইফ ছিলেন খানিক ধীর। শচিনের সঙ্গে তার জুটিটি ছিল ৫৩ রানের। তবে এতে কেটে যায় ৩৮টি বল। কাইফ আউট হন ২১ বলে ২৭ রান করে। এরই মাঝে ফিফটি তুলে নেন শচিন। ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলে তাকে সাজঘরে পাঠান টিনো বেস্ট। আউট হওয়ার আগে ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৪২ বলে ৬৫ রান করেন শচিন।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ক্যারিবীয়দের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন ইউসুফ ও যুবরাজ। তাদের জুটিতে আসে ৩৫ বলে ৬৮ রান। যুবরাজ ১ চার ও ৬ ছয়ের মারে করেন ২০ বলে ৪৯ রান। তার সমান ২০ বল খেলে ৩৭ রানের অপরাজিত থাকেন ইউসুফ। এ জুটির কল্যাণেই ২১৮ রানে পৌঁছায় ভারতের ইনিংস।
নদী বন্দর / এমকে