হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবারের মামলার কথা তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা নিজেদের আমিরকে হত্যা করার মতো অপকর্ম করে তাদের হাতে ধর্ম-রাষ্ট্র কোনটাই নিরাপদ নয়।
রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলমান বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় সরকার ইসলামি দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার যেকোনো নৈরাজ্য দমনে বদ্ধপরিকর। কারণ সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। সরকারের দায়িত্ব সরকারি সম্পত্তি ও জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করা। সুতরাং আজ যারা এই কাজগুলো করছেন, সরকারের দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য রাষ্ট্রের শান্তি, স্থিতি ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্য তাদের দমন করা। সরকার অবশ্যই এটি কঠোর হস্তে দমন করবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতের আমির ছিলেন মাওলানা আহমেদ শফী। তার বয়স শতবর্ষের কাছাকাছি ছিল। তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে যে, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যে মামলা তদন্তাধীন আছে। তাদের অভিযোগ হচ্ছে, মাওলানা শফীর নাকে রাইস টিউব ছিল এবং তাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। যারা হামলা-হাঙ্গামা করেছিল তারা মাওলানা আহমেদ শফীর অক্সিজেন খুলে নিয়েছিল। সেই কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। যারা নিজেদের আমিরকে হত্যা করার মতো অপকর্ম করে তাদের হাতে ধর্ম-রাষ্ট্র কোনোটাই নিরাপদ নয়।’
‘তাই যে নেতৃবৃন্দ এ কাজটি করেছেন তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যই আজ এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আমি কওমি মাদরাসার সবাইকে অনুরোধ জানাব, তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য আপনারা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হবেন না। সরকার কওমি মাদরাসার জন্য অনেক কিছু করেছে এবং ইসলামের খেদমতের জন্য অনেক কিছু করেছে সরকার।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ২০ জন বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সংকীর্ণ হয়েছে’- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিবৃতিটি দেখেছি। যে ২০ জন বিবৃতি দিয়েছেন তাদেরকে বুদ্ধিজীবী বলতে আমার লজ্জা হচ্ছে। তাদের উচিত ছিল, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন যারা ধর্মের নামে হাঙ্গামা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে একটি বিবৃতি দেয়া। কিন্তু তারা সেটি না করে সরকারি সম্পত্তিতে যে আগুন দেয়া হয়েছে, ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, রেলওয়ে স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, থানায় আক্রমণ করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে, স্বাধীনতা দিবস পালন না করে যারা এসব করেছে তাদের সমালোচনা না করে বরং তাদের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দেয়ার পর তারা আর স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে দাবি করতে পারেন না। তারা আর টেলিভিশনের পর্দায় গিয়ে সুশীল বলে দাবি করতে পারেন না। তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছেন। তাই তাদেরকে বুদ্ধিজীবী বলতে আমাদের লজ্জা হচ্ছে।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ ছিল- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন। সেদিন স্বাধীনতা দিবস পালন না করে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যারা বিশৃঙ্খলা করেছে। তারা সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, কারণ কেন নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসলেন। ভারতবর্ষ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে ভারতের সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের রক্ত ঝরিয়েছে। সেসময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য একদেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কোনো দলের নেতা হিসেবে নয়, আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি এসেছেন সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
নদী বন্দর / এমকে