1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
শিল্প-কারখানাসহ চিহ্নিত দখলদার ৪৮৯: দখল-দূষণে বিপন্ন তুরাগ - Nadibandar.com
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১
  • ২১৩ বার পঠিত

দখলে-দূষণে বিপন্ন হয়ে গতি হারিয়ে ফেলেছে তুরাগ নদী। তুরাগের দুই পাড়ে শিল্প কলকারখানাসহ ৪৮৯ জন দখলদারকে ইতোমধ‌্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

গাজীপুরে তুরাগ নদীসহ ৪৮টি নদীর দূষণ এবং অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে নদী রক্ষার জন্য একটি নদী সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে নদী দখল সংক্রান্ত দখলকারীদের নাম ও বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

 

সোমবার (২৯ মার্চ) সমীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, নদীর সীমানা চিহ্নিতকরণ পূর্ব পিলার স্থাপন না করায় সঠিক দখলদারদের চিহ্নিত করার জন্য পোর্ট অ‌্যাক্ট ১৯০৮ ও পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী তুরাগ নদীর তীর থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা এবং পোর্ট এলাকায় নদীর তীরবর্তী ৫০ মিটার পর্যন্ত এলাকার আওতাধীন ভূমির দখল ও অন্যান্য অবকাঠামোর তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। 

সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে গাজীপুর জেলায় তুরাগ নদীতে প্রায় ৪৮৯টি দখল দেখা গেছে। এর মধ্যে পাকা স্থাপনা ৫০টি। আধাপাকা/টিনসেড স্থাপনা ৪১২টি, ইটভাটা ১৬টি, পার্ক/রিসোর্ট একটি, শিল্পকারখানা/ফ্যাক্টরি ছয়টি।

এছাড়া দখলদারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সদর উপজেলায় একটি মেডিক‌্যাল কলেজ, দুটি পাওয়ার প্লান্ট ও একটি ডেইরি ফার্ম রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার সামিট গ্রুপের পাওয়ার প্লান্ট, ইসলাম গার্মেন্টস, অনুভব ডেইরি ফার্ম ও ডিবিএল গ্রুপ। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নদীর দ্বিতীয় শাখায় এননটেক্স, নিট বাজার ফেব্রিক্স ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিক‌্যাল কলেজ রয়েছে।

 

তুরাগ পাড়ের সাধারণ মানুষের বক্তব‌্য অনুযায়ী- গাজীপুরে পরিবেশ ও নদী দূষণ করে যাচ্ছে ইটিপি বিহীন কল-কারখানাগুলো। এসব কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার অভিযান চালালেও দূষণ রোধ হচ্ছে না। নদী দূষণের কারণে শুষ্ক মৌসুমে গাজীপুরের নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি কালো রং ধারণ করে। দূষিত পানি নদী ও খালে গিয়ে পড়ছে। এতে সেসব পানি নষ্ট হচ্ছে। 

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন ইসলামপুর ভাঙ্গাব্রিজ সংলগ্ন বিল ও বেলাই বিল এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। এছাড়া কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ছাড়াও টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়িং কারখানাসহ নানা প্রকার ছোটবড় কয়েকশ’ কারখানা।

ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা শরীফ হোসেন জানান, নদীর তীরে গড়ে ওঠা এসব কারখানাগুলোর মধ্যে কিছু বড় কারখানায় পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ইটিপি থাকলেও বর্ষায় এসব ইটিপি তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। কারখানার দূষিত পানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদীতে। দূষিত ও বিষাক্ত এসব পানি সরাসরি নদী ও খালে গিয়ে পড়ছে। এতে নদীর সমস্ত জীববৈচিত্র‌্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তুরাগ নদীর তীরে ইসলামপুর ভাঙ্গাব্রিজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে রাস্তার পাশে নির্মিত ড্রেন দিয়ে কারখানার দূষিত পানি বের হয়ে সরাসরি নদীর পানিতে পড়ছে। বেলাই বিল এলাকায় খাল-বিলের পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। এখানে পানি চলমান না থাকায় কলকারখানার পানি খালে পড়ে তা সরতে পরছে না। জেলেরা খাল ও বিলে যে মাছ ধরছেন তার রংও কালো হয়ে গেছে। এসব খাল-বিলে আগের মতো মাছও আর নেই। নৌকায় করে তুরাগ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে সরাসরি নদীতে বর্জ্য ফেলার দৃশ‌্য দেখা গেছে।

স্থানীয় জেলে সুকমল সরকার জানান, তিনি শৈশবে এ সময়ে দেখেছেন তুরাগে প্রবল স্রোত ছিল। চোখের সামনে কীভাবে এই নদী ধীরে ধীরে দূষণের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে উঠল সেটি দেখলে তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। 

তিনি বলেন, ‘নদীটি অনেক সুন্দর ছিল। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি ড্রেনের মতো হয়ে যায়। তুরাগে মাছ ধরে অনেকেই যেমন জীবন-জীবিকা চালিয়েছেন, তেমনি খাবারের পাতেও তুরাগের মাছ ছিল একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দূষণে বিপর্যস্ত এই নদীতে এখন মাছের দেখা পাওয়া মুশকিল। তুরাগ নদের দুই পাড়ে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে একদিকে যেমন ঘনবসতি গড়ে উঠেছে অন্যদিকে শিল্প-কারখানাও হয়েছে সমানতালে। তুরাগ এখন বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও নদী গবেষক মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, গত কয়েক বছরে তুরাগ তীরের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ চালিয়ে অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি। একটা সময় শিল্প স্থাপন করাটাই গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি, পরিবেশ নয়। এখন সময় এসেছে নদী খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে তুরাগ পাড়ে যেসব শিল্পকারখানা আছে তাদের অনেকেরই তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নেই। যাদের ইটিপি আছে খরচ বাঁচানোর জন্য তাদের অনেকেই সেটি ব্যবহার করছে না। ফলে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর অংশের উপ-পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, কারখানাগুলো যাতে বর্জ্য পরিশোধন করে সেটি তারা তদারকি করছেন। এখন ইটিপি ছাড়া কোনো কারখানাকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘নদী দূষণে শুধু কারখানার বর্জ্য একা দায়ী নয়। পাশাপাশি পয়ঃবর্জ্য ও গৃহস্থালী বর্জ্যও নদীতে ফেলা হচ্ছে। দূষণের দায়ে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হচ্ছে। দূষণ রোধে সব রকম চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

নদী বন্দর / এমকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com