ভারতের যেসব নাগরিক সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্য করে দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মনোজ নারাভানে বলেছেন, যুদ্ধ কোনো রোমান্টিক ব্যাপার নয় এবং এটি বলিউডের ফিল্মের মতো উপভোগ্যও নয়।
সোমবার (১২ মে) পুনে জেলায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মনোজ নারাভানে বলেন, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরকারী লোকজন সারাক্ষণ একধরনের ট্রমা বা ভীতিতে ভোগেন। কারণ যুদ্ধের কারণে স্বজণের মৃত্যু এবং আশ্রয়হীন হয়ে যাওয়া তারা জন্ম থেকেই দেখে আসছেন।
ভারতের সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, সরকারের নির্দেশ পেলে এখনও তিনি যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি সবসময় কূটনীতিকে তার প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধ রোমান্টিক কোনো ব্যাপার নয়, আপনাদের বলিউডের মুভিও নয়। এটা খুবই গুরুতর একটি ব্যাপার। শেষ পন্থা হিসেবে যুদ্ধ বা সহিংসতা বেছে নেওয়া উচিত সেই সময়ে, যখন যাবতীয় কূটনীতি ব্যর্থ হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে এখন যুদ্ধের সময় নয়। যদিও কিছু নির্বোধ মানুষ আমাদের ওপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এজন্য আমাদের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই।
‘এখনও অনেকে প্রশ্ন করছেন যে কেন আমরা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে গেলাম না। একজন সৈনিক হিসেবে, যদি আমার কাছে নির্দেশ আসে— তাহলে আমি যুদ্ধে যাব; কিন্তু আমার কাছে সেটি প্রথম পছন্দ হবে না।’
তিনি বলেন, আমার প্রথম পছন্দ হবে কূটনীতি; অর্থাৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা। এটি শুধু দুই বা একাধিক দেশের মধ্যে নয়, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এর চর্চা থাকা উচিত। সহিংসতা কোনো সমাধান হতে পারে না।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করল পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানি উল মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।
এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি।
নদীবন্দর/এএস