জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স পার্কে ম্যাচটি হয়তো শেষপর্যন্ত সহজেই জিতত দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩১ রান। অতিমানবীয় কিছু না ঘটলে এ ম্যাচে স্বাগতিকদের জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে পাকিস্তানের আশার প্রতীক হিসেবে ছিলেন ১৯২ রানে খেলতে থাকা ফাখর জামান।
তখনই ঘটে অদ্ভুত রানআউটের কাণ্ড। লুঙ্গি এনগিডির করা শেষ ওভারের প্রথম বলটি লংঅনের দিকে খেলে দিয়ে সহজেই প্রথম রান নেন ফাখর, দৌড় দেন দ্বিতীয় রানের জন্য। চতুরতা দেখান প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক। লংঅফের ফিল্ডার এইডেন মারক্রামকে তিনি ইশারা করেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থ্রো করার জন্য।
কিন্তু মারক্রাম থ্রো’টি করেন স্ট্রাইকিং প্রান্তেই। ডি ককের হাতের ইশারায় ঘুরে দেখেন ফাখর, তাতেই ঘটে সর্বনাশ। মারক্রামের সরাসরি থ্রো এসে ভেঙে দেয় স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প। ফলে ১৯৩ রানে রানআউট হতে হয় ফাখরকে। দলের ১৭ রানের পরাজয়ের পাশাপাশি নিজের ডাবল সেঞ্চুরিটাও হাতছাড়া হয় ফাখরের।
আউট হওয়ার আগে ১৮ চার ও ১০ ছয়ের মারে ১৫৫ বলে ১৯৩ রান করেন ফাখর। যা কি না ওয়ানডে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের বিশ্বরেকর্ড। ফাখর ভেঙেছেন ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেন ওয়াটসনের করা ১৮৫ রানের রেকর্ড।
এ আউট নিয়েই এখন চলছে চারিদিকে নানান আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন ক্রিকেট স্পিরিটের পরিপন্থী কাজ করেছেন ডি কক। আবার কেউ কেউ সরাসরি তুলে ধরেছেন ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক নিয়ম। আইসিসির রুলবুকের ৪১.৫.১ এর অনুচ্ছেদে বলা আছে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ভুল পথে পরিচালিত করলে সেটিতে ৫ রান পেনাল্টি দেয়া হবে।
এখন ডি কক ইচ্ছাকৃতভাবেই করেছেন নাকি মারক্রামকে ইশারা করেছেন তা স্পষ্ট নয়। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটও দেননি কোনো সিদ্ধান্ত। তবে শুধু এই রানআউট নয়। পাকিস্তানের ইনিংসের ৪৭তম ওভারে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার মাটিতে পড়া টুপিতে লেগেছিল বল। নিয়মানুযায়ী এই বলেও ৫ রান পেনাল্টি পাওয়ার কথা পাকিস্তানের। কিন্তু কোনোটিই পায়নি তারা।
যা নিয়ে রীতিমতো অবাক ও বিস্মিত পাকিস্তানের সাবেক গতিতারকা শোয়েব আখতার। তার মতে, এ দুই ১৩ রান না দিয়ে পাকিস্তানের জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ম্যাচ শেষে এ বিষয়ে এক ভিডিওবার্তায় বিস্তারিত কথা বলেছেন শোয়েব। এটিকে তিনি প্রতারণা না বললেও, স্পিরিট অব দ্য ক্রিকেটের পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শোয়েব তার ভিডিওবার্তায় বলেছেন, ‘ম্যাচ তো আপনারা দেখেই নিয়েছেন। আমার যেমন হতাশা কাজ করছে, আপনারাও নিশ্চয়ই হতাশ। ফাখর জামানের ২০০ হলো না। আমি এটাকে প্রতারণা বলবো না। তবে এটাকে আমি ভালো ক্রিকেট স্পিরিট বলতেও রাজি নই। যেভাবে ডি কক আউটটা করল…’
‘৪১.৫ এর অনুচ্ছেদে বলা আছে, আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ভুল পথে পরিচালিত করেন তাহলে ৫ রান পেনাল্টি দেয়া হবে, সেই বলটি আবার করা হবে এবং ঐ বলে নেয়া সব রানও যোগ হবে। তার মানে দাঁড়ায়, দৌড়ে নেয়া ২ রান, নো বলে ১ রান ও পেনাল্টি থেকে ৫ রান- সবমিলিয়ে ৮ রান। পাশাপাশি স্পিরিট অব দ্য গেমও নষ্ট হয়েছে।’
‘আমার এটা ভালো লাগেনি। কুইন্টন ডি কক খুবই ভালো ছেলে। তার ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করা ঠিক হয়নি। কারণ এত দূর থেকে যখন থ্রো করা হয়েছে, তখন ফাখর ভেবেছে নন স্ট্রাইক প্রান্তেই যাবে বল। ডি ককও এটিই দেখিয়েছে হাতের ইশারায়। এটা দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি চেয়েছিলাম ফাখর জামান দুইশ করুক।’
‘যদি এই ৮ রান দিয়ে দেয়া হতো এবং ফিল্ডারের টুপিতে বল লাগায় আরও ৫ রান দেয়া উচিত ছিল। সেই বলে ১ রান নেয়া হয়েছিল। তার মানে যদি এই ৫ ও পরে শেষ ওভারের ৮ রান দিয়ে দেয়া হতো, তাহলে পাকিস্তান সহজেই ম্যাচটি জিততে পারত।’
‘আমার দুঃখ লেগেছে যে সেখানে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারেননি আম্পায়াররা। ম্যাচ রেফারিও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি সেখানে। ম্যাচ রেফারি যখন সব দেখছেন, রিপ্লে দেখে সব পরিষ্কার হলেন, তবু কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। এখানে নিয়মের প্রতিফলন কেনো ঘটানো হয়নি তা আমাকে দুঃখ দিয়েছে।’
নদী বন্দর / জিকে