রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর কাছে হেরে এবারের আইপিএলে যাত্রা শুরু করেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তবে পরের ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে মাত্র ১৫২ রানের সংগ্রহ নিয়ে ১০ রানের দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়েছিল আইপিএলের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
এবার মুম্বাইয়ের তৃতীয় ম্যাচে কলকাতার মতোই ভাগ্যবরণ করতে হলো হায়দরাবাদকে। বোলারদের নৈপুণ্যে মুম্বাইকে ১৫০ রানে আটকে ফেলেছিল হায়দরাবাদ। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা পারেননি ম্যাচ শেষ করতে। বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ১৩ রানের জয় পেয়েছে মুম্বাই।
চলতি আসরে এটি মুম্বাইয়ের দ্বিতীয় জয়। তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে রোহিত শর্মার দল। অন্যদিকে নিজেদের আইপিএল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আসরের প্রথম তিন ম্যাচেই হারল হায়দরাবাদ। স্বাভাবিকভাবেই টেবিলের তলানিতে রয়েছে তারা।
অথচ ১৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুটা দুর্দান্ত করেন হায়দরাবাদের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো। দেখেশুনে খেলে প্রথম দুই ওভারে ৫ রান নেয় হায়দরাবাদ। তবে পরের ৪ ওভারে বেয়ারস্টো ঝড়ে আসে ৫২ রান। অর্থাৎ পাওয়ার প্লে’তে হায়দরাবাদ পেয়ে যায় বিনা উইকেটে ৫৭ রান।
অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার একপ্রান্ত আগলে রেখে যেন দর্শকের ভূমিকায় দেখছিলেন বেয়ারস্টোর তাণ্ডব। তৃতীয় ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম চার বলেই ২০ রান নিয়ে নেন বেয়ারস্টো। অ্যাডাম মিলনের করা পরের ওভারে এক চার ও দুই ছয়ে আসে ১৯ রান।
পেসাররা সুবিধা করতে পারেননি দেখে পঞ্চম ওভারে স্পিন আনেন রোহিত শর্মা। কিন্তু ক্রুনাল পান্ডিয়ার করা প্রথম ওভারেই ১৩ রান নিয়ে নেন বেয়ারস্টো-ওয়ার্নার। তবে ষষ্ঠ ওভারে দুই রান খরচা করে খানিক লাগাম টানেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তার প্রথম দুই ওভারে ৫ রানের বেশি পায়নি হায়দরাবাদ।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর অতি আক্রমণাত্মক হওয়ার মাশুল গুনতে হয় বেয়ারস্টোকে। ক্রুনালের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিল লেগস্ট্যাম্পেরও বাইরে শর্ট পিচড। যেটি দেখে হাঁটু গেড়ে সজোরে সুইপ খেলতে যান বেয়ারস্টো। কিন্তু ভারসাম্য হারিয়ে নিজের পেছনের পা দিয়ে ভেঙে দেন স্ট্যাম্প।
যার ফলে হিট উইকেটে সমাপ্তি ঘটে বেয়ারস্টোর ২২ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ের মারে খেলা ৪৩ রানের ইনিংসের। এরপর রীতিমতো খোলসের মধ্যে ঢুকে যায় হায়দরাবাদের ইনিংস। প্রথম ছয় ওভারে ৫৭ রান করা দলটি পরের ৪ ওভারে নিতে পারে মাত্র ১৭ রান।
আগের দুই ম্যাচে ধীরগতির ইনিংস খেললেও রান পেয়েছিলেন মানিশ পান্ডে। কিন্তু আজ ৭ বল খেলে মাত্র ২ রান করে ফিরে যান সাজঘরে। তার উইকেট নেন মুম্বাইয়ের আগের ম্যাচের নায়ক রাহুল চাহার। পরে এক ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে রানের চাকা ধীর হলেও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ওয়ার্নার। তার বিদায়ঘণ্টা বাজে হার্দিক পান্ডিয়ার দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। ইনিংসের ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে পয়েন্ট অঞ্চলে পান্ডিয়ার হাতে রেখে এক রান নিতে চেয়েছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু পান্ডিয়ার সরাসরি থ্রো’তে সমাপ্তি ঘটে তার ৩৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংসের।
এরপর হতাশ করেন ভিরাট সিং (১২ বলে ১১), অভিষেক শর্মা (৪ বলে ২), আব্দুল সামাদ (৮ বলে ৭) ও রশিদ খানরা (১ বলে ০)। তবে লড়াই করেছিলেন বিজয় শংকর। ক্রুনালের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারে দুই ছয়ের মারে তুলে নেন ১৬ রান। যার ফলে সমীকরণ নেমে আসে ২৪ বলে ৩১ রানে।
কিন্তু বুমরাহ ও বোল্টের করা শেষ চার ওভারে জয়ের পথ খুঁজে নিতে পারেননি শংকর। ইনিংসের ১৮তম ওভারে সামাদ ও রশিদ সাজঘরে ফেরেন। পরের ওভারে শংকরকে ফেরান বুমরাহ। আর শেষ ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে হায়দরাবাদকে ১৩৭ রানে অলআউট করে দেন বোল্ট।
মুম্বাইয়ের পক্ষে বল হাতে ৪ ওভারে ১৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন রাহুল চাহার। বোল্টের শিকারও ৩ উইকেট, খরচা ২৮ রান। মাত্র ১ উইকেট পেলেও চার ওভারে ১৪ রানের বেশি খরচ করেননি বুমরাহ। যার সুবাদে পরপর দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে মুম্বাই।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুম্বাইয়ের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান বেশ ভালোই খেলছিলেন। রোহিত শর্মা এবং কুইন্টন ডি ককের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৫৫ রানের জুটি। এ সময় ২৫ বলে ৩২ রান করে আউট হয়ে যান রোহিত শর্মা।
আউট হওয়ার আগে ৩৯ বলে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন কুইন্টন ডি কক। সুর্যকুমার যাদব করেন ১০ রান। ইশান কিশান করেন ১২ রান। কাইরন পোলার্ড ২২ বল খেলে ছিলেন অপরাজিত, করেছেন ৩৫ রান।
হার্দিক পান্ডিয়া আউট হন ৭ রান করে। ক্রুনাল পান্ডিয়া অপরাজিত ছিলেন ৩ রানে। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৫০ রান যোগ করতে পারে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। হায়দরাবাদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন মুজিব-উর রহমান এবং বিজয় শঙ্কর। ১ উইকেট নেন খালিদ আহমেদ।
নদী বন্দর / এমকে