দীর্ঘদিন ধরে সার্কাস বন্ধ। করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় বেতন দিতে পারছিলেন না মালিক। তাই মালিকের বাড়ির পাঁচতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন সার্কাসের ৫ তরুণী।
রোববার (১৮ এপ্রিল) ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এলাকায়। তবে শেষমেশ পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার স্যান্ডাল স্ট্রিটের একটি পাঁচতলা বাড়িতে থাকেন ওই সার্কাসের মালিক। এর আগে দেশজুড়ে ঘুরতো এই সার্কাস। প্রত্যেক বছর শীতকালে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে সার্কাস দেখাতো দলটি। বাঘ, সিংহ ও বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে, তাদের সার্কাসেও ভিড় কম হতে থাকে। তবুও কোনো মতে চলছিল সার্কাসটি।
পুলিশ বলছে, সার্কাসের মালিক কর্মচারীদের ঠিকঠাকই বেতন দিচ্ছিলেন। কিন্তু গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউনের পর থেকে সার্কাসের অবস্থা করুণ হয়ে পড়ে। করোনা পরিস্থিতিতে গত শীতেও বসেনি সার্কাস। সার্কাসের কলাকুশলীরা প্রায় বসেই কাটিয়েছিলেন। এর ফলে তলানিতে গিয়ে ঠেকে মালিক ও কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থা।
এর মধ্যে কর্মচারীরা শুনতে পান, সার্কাস বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন মালিক। ছোটবেলা থেকেই ওই সার্কাসে কাজ করতেন তরুণীরা। সেখানেই কাজ শিখেছেন। তাদের কারও বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর বা বারুইপুরে। আবার কেউ খড়গপুরের বাসিন্দা। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এসে হাজির হন তারা। সেখান থেকে পৌঁছে যান স্যান্ডাল স্ট্রিটে, সার্কাসের মালিকের বাড়িতে। মালিকের সঙ্গে দেখা করে টাকা চান তারা।
পরে ওই তরুণীরা পুলিশকে জানান, তাদের বেতন বকেয়া ছিল। টাকা চাইতে গেলে তাদের পুরো টাকা দেননি মালিক। তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। এর পরই বাড়ির একটি বারান্দায় চলে আসেন তারা। বারান্দায় হাতে হাত ধরে দাঁড়ান পাঁচজন। চিৎকার করে বলতে থাকেন, তারা বেতন পাচ্ছেন না, তারা সবাই খুব অভাবের মধ্যে আছেন। তাই বকেয়া টাকা না পেলে তাদের বেঁচে থেকে লাভ নেই। নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন তারা।
ওই তরুণীদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলাকার বাসিন্দারা আঁতকে ওঠেন। তরুণীদের নেমে আসতে বলেন তারা। কিন্তু তারা নামতে নারাজ। কয়েকজন বাসিন্দা পাঁচতলার ঘর লাগোয়া বারান্দাটিতে উঠে যান। এর মধ্যে এলাকার বাসিন্দারা পার্ক স্ট্রিট থানায় পুরো ঘটনাটি জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে।
শেষ পর্যন্ত সবার অনুরোধে বিপজ্জনক জায়গা থেকে বেরিয়ে আসেন ৫ তরুণী। পুলিশ কর্মকর্তারা সার্কাসের মালিকের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়। বকেয়া বেতন ওই তরুণীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর বাড়ি ফিরে যান তারা।
নদী বন্দর / জিকে