টানা ভারীবর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ ও ভূমিধসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চার দেশে— ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় প্রাণহানির সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। এতে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশগুলোর কয়েক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় সুমাত্রা দ্বীপে বন্যা ও ভূমিধসে এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। আরও প্রায় ৪০২ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা (বিএনপিবি)।
মূলত, ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার নামের একটি অস্বাভাবিক ও অনেকটা বিরল উষ্ণমন্ডলীয় ঝড়ের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিধ্বস ও বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে ও হাজার হাজার ভবন পানিতে ডুবে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর সুমাত্রা, পশ্চিম সুমাত্রা এবং আচেহ্।
বিএনপিবি প্রধান সুহারিয়ানতো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা পাঠানো হচ্ছে কিন্তু কিছু গ্রামে এখনো কিছুই পৌঁছায়নি। ফলে বেঁচে থাকার জন্য খাবার ও পানি চুরির অভিযোগ উঠছে।
পশ্চিম সুমাত্রার রাজধানী পাদাং থেকে একশাে কিলোমিটার দূরে সুংগাই নিয়ালো গ্রামে রবিবার নাগাদ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পুরো গ্রামের বাড়িঘর, যানবাহন ও ফসলের জমি কাদায় ঢেকে গেছে।
এদিকে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বন্যা- ভূমিধসে কমপক্ষে ৩৩৪ জনের মৃত্যু এবং বমপক্ষে ৩৬০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ইংরেজি সংবাদপত্র ডেইলি মিরর জানিয়েছে, ১৭ নভেম্বর থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার পানি বৃদ্ধি এবং ক্রমাগত ভূমিধস অব্যাহত রয়েছে। যদিও টানা ভারি বর্ষণ এখন কিছুটা কমে গেছে, রাজধানী কলম্বোর নিচু এলাকাগুলো এখনও পানির নিচে রয়েছে এবং দেশের মধ্যাঞ্চলের অনেক এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। এতে দেশটির ১৭টি জেলার প্রায় ১১ লাখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে থাইল্যান্ড সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার জেরে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ১০টি প্রদেশে এ পর্যন্ত ১৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে এসব প্রদেশের মোট ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ লাখ মানুষ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে দেশটির দক্ষিণের ১০টি প্রদেশে বন্যা আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাট ইয়াই শহর, যেখানে ৩০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে— একদিনে ৩৩৫ মিলিমিটার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, হাট ইয়াই শহরের যানবাহন ও ঘরবাড়ি ডুবে আছে, আর হাজার হাজার বাসিন্দারা তাদের বাড়ির ছাদে উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়াও অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ার সাতটি রাজ্যে ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই থাইল্যান্ডের ২৫টিরও বেশি বন্যা কবলিত হোটেলে আটকে পড়া ১ হাজার ৪৫৯ জন মালয়েশিয়ান নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে এবং বন্যা অঞ্চলে আটকে থাকা বাকি ৩০০ জনকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছে।
নদীবন্দর/এএস