অবশেষে ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানাল শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। নিজেদের লিডটাকে তারা বাড়িয়ে নিয়েছে ৪৩৬ রান পর্যন্ত। যার ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের ৯ উইকেট তুলে নিলেও এখন ৪৩৭ রানের হিমালয়সম লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে হবে বাংলাদেশকে।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৪৯৩ রান করে ইনিংস ছেড়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশ দল অলআউট হয় ২৫১ রানে। নিয়ম মোতাবেক বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়লেও, তা করাননি লঙ্কান অধিনায়ক। ২৪২ রানের বিশাল লিড নিয়ে নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নামেন দ্বিতীয় ইনিংসে।
আজ (রোববার) ম্যাচের চতুর্থ দিন দ্বিতীয় সেশনে ইনিংস ঘোষণার আগে শ্রীলঙ্কা করেছে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান। প্রথম ইনিংসের ২৪২ রানসহ তাদের লিড দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ রানের। এ রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে হবে বাংলাদেশকে। যা রীতিমতো অসাধ্য সাধনের এক মিশন।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১৫ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। আর সাদা পোশাকের অভিজতা ক্রিকেটে রান তাড়া করে জেতার বিশ্বরেকর্ড ৪১৮ রানের। অর্থাৎ ম্যাচ জিততে এখন ইতিহাসই গড়তে হবে মুমিনুল হক, তামিম ইকবালদের।
শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেট নেয়ার পথে ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো ফাইফার তথা ৫ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এ নিয়ে দেশের মাটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইফার পেলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি ফাইফার রয়েছে শুধুমাত্র সাকিব আল হাসানের (১৮)।
তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে ৭ ওভার ব্যাটিং করে ২ উইকেট হারিয়ে ১৭ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। আজ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলার ইঙ্গিত দেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান দিমুথ করুনারাত্নে ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি মিরাজের ভিন্ন ভিন্ন ওভারে ছক্কা হাঁকান দুজনই।
তবে ম্যাথুজকে বেশিক্ষণ হাত খুলে খেলতে দেননি তাইজুল। ইনিংসের ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ম্যাথুজকে শর্ট লেগে দাঁড়ানো ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে ক্যাচে পরিণত করে সাজঘরে পাঠান তাইজুল। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ১২ রান করেন ম্যাথুজ।
এরপর ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে নিয়ে জুটি গড়েন করুনারাত্নে। তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৭৩ রান। দুজনই রান তুলতে থাকেন ওয়ানডে মেজাজে। তাইজুল-মিরাজকে দিয়ে কাজ হচ্ছিল না দেখে ইনিংসের ২১তম ওভারে তাসকিন আহমেদকে আক্রমণে আনেন মুমিনুল।
তবে এক ওভার পরই সরিয়ে দেয়া হয় তাসকিনকে। শেষমেশ পার্টটাইমারের দ্বারস্থ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাইফের ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের শেষ বলে শর্ট লেগে দাঁড়ানো বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে ধরা পড়েন ৬৬ রান করা করুনারাত্নে।
অধিনায়কের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ধনঞ্জয়ও। মেহেদি মিরাজের করা ইনিংসের ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। পরের বলেই আউটসাইড এজ হয়ে ধরা পড়েন স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে।
আউট হওয়ার আগে ৪ চার ও ১ ছয়ের মারে ৫২ বলে ৪১ রান করেন ধনঞ্জয়। যা শ্রীলঙ্কার রানের গতি কখনও কমতে দেয়নি। এরপর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৮ রান যোগ করেন নিরোশান ডিকভেলা ও পাথুম নিসাঙ্কা। মধ্যাহ্ন বিরতির খানিক আগে তাইজুলের তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন ২৪ রান করা নিসাঙ্কা।
সেশনের বাকিসময়ে আর বিপদ ঘটতে দেননি ডিকভেলা ও রমেশ মেন্ডিস। দুজন মিলে ৭.২ ওভার খেলে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ করেন ১০ রান। ইনিংসের ৩৮ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৭২ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
বিরতি শেষে ফিরে কিছুই করতে পারেননি ডিকভেলা। দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারেই তাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। এরপর আর ১৬ রান যোগ করতে রমেশ মেন্ডিস ও সুরঙ্গা লাকমলের উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দুই ছয়ের মারে ১২ রান করেন লাকমল।
ইনিংসের ৪৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লাকমলকে সরাসরি বোল্ড করে ফাইফার পূরণ করেন তাইজুল। এছাড়া মেহেদি মিরাজ ২, তাসকিন আহমেদ ১ ও সাইফ হাসানের শিকার ১টি উইকেট।
নদী বন্দর / এমকে