করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও লকডাউনের কারণে পশ্চিমের জেলাগুলোর ফুল বাজার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। খেতে নষ্ট হচ্ছে ফুল। এদিকে চাষিরা খেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছেন। অনেকে ফুলখেত নষ্ট করে অন্য ফসল চাষ করছেন। এতে তাদের লোকসান হচ্ছে। সেইসঙ্গে কয়েক হাজার ফুল শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পানিসরা গ্রামে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয় আশির দশকে। ফুল ভালো লাভ দেখে আশপাশের গ্রামে ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে রজনীগন্ধার চাষ হতো। পড়ে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্র মল্লিকা, জারবেরা ও গাদা ফুলের চাষ শুরু হয়। আর এর মধ্য দিয়ে ফুল একটি নতুন অর্থকরি ফসলের রূপ পায়। যশোরের গদখালীতে ফুলের পাইকারি বাজার গড়ে ওঠে। পরে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয়। ঝিনাইদহের বালিয়াডাঙ্গা ও গান্নাতেও ফুলের পাইকারি বাজার গড়ে ওঠে।
কিন্তু গত বছর করোনার কারণে লকডাউন শুরু হলে ফুলের বাজারগুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। পরে ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও ফুল খেতগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে কম দামেও ফুল বিক্রি করতে পারে না চাষি। চাষ কমে যায়। বর্তমানে যশোর জেলায় ৬৩৯ হেক্টরে, ঝিনাইদহে ৫৮ হেক্টরে ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩০ হেক্টরে ফুল খেত আছে। করোনা সংক্রমণ কমে গেলে জানুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা বাড়তে থাকে। দামও বেড়ে যায়। বাজার চাঙ্গা হয়। পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভালো ফুল কেনাবেচা হয়। চাষিরা আশা করেছিলেন লোকসানের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে ফের বিপর্যয় নেমে আসে ফুল বাণিজ্যে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুল চাষ করে তার সংসার চলে। গত বছর ফুল চাষে তার ১ লাখ টাকা লোকসান হয়। একটি খেত ভেঙে সবজি চাষ করেছেন। এবারও তার লাখ টাকা লোকসান হবে। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের বড় ফুলচাষি মো. টিপু সুলতান জানান, ফুলের পাইকারি বাজারগুলোতে ক্রেতা নেই। খেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে। সব ফুল চাষির একই অবস্থা। চাষিরা ফুল ছেড়ে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি গদখালীর মো. আব্দুর রহিম বলেন, এ অঞ্চলে আনুমানিক ১০ হাজার ফুল শ্রমিক দুর্দিনে পড়েছেন। গদখালী পাইকারি ফুল মার্কেটে ক্রেতা নেই। চাষিরা ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শুধু যশোর জেলা তেলাতেই ৬ হাজার পরিবার ফুল চাষ করে। ফুল বিক্রি না হওয়ায় তারা সংকটে পড়েছেন। ফুল চাষিদের সহায়তা দেওয়ার জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় ১৭৩ হেক্টরে ফুল চাষ হয়েছিল। এবার তা ৫৮ হেক্টরে নেমে এসেছে। উৎপাদিত ফুল বিক্রি হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
নদী বন্দর / জিকে